‘এত দর্শকের সামনে খেলাটা ছিল চ্যালেঞ্জ। দেশকে জেতানোর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কিছু হয় না। তার উপর সেটা যদি হয় ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে। এটা আমার জীবনের একটা বিরাট প্রাপ্তি। নাঈম আর সৌম্যও খুব ভালো খেলেছে। আমরা কখনো চাপটা বাড়তে দিইনি।’
অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে রোববারের ম্যাচে বিপ্লব-সৌম্যরা যখন পার্শ্বনায়ক, তখন মুশফিক নিশ্চিতভাবেই নায়ক। ম্যাচ শেষে জয়ের নায়ক প্রাপ্তি নিয়ে বলেছেন এভাবেই।
দিল্লিতে ১৬ ওভার পর্যন্ত দারুণভাবে ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। ১৭ নম্বর ওভারে সৌম্য ফেরার পর লড়াইয়ে ফেরে ভারত। শেষ দু’ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ২o রানের বেশি। ক্রিজে তখন দুই অভিজ্ঞতম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ভারতের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে প্রথমবার জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। দরকার ছিল মাথা ঠাণ্ডা রেখে রানটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ১৯তম ওভারে খলিলকে পরপর চারটি চার মেরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস উজ্জ্বল করেন মুশফিক। ৯ ম্যাচ খেলে এই প্রথম ভারতের বিরুদ্ধে টি-টুয়েন্টিতে জয়।
৪৩ বলে অপরাজিত ৬০ রান করে নায়ক মুশফিকই। ওই ইনিংস খেলার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে চলছে বন্দনা। ভক্ত-সমর্থক থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গণমাধ্যম, সব জায়গাতেই বড় ছবি মুশফিকের।
তার বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিং নিয়ে অনেক ধরনের শিরোনাম হয়েছে, তবে মুশির ব্যাটিংয়ের কারণে যে ভারত হারল সেদেশের এক দৈনিকের শিরোনাম মনে ধরার মতো। চাপের মধ্যে মাথা ঠাণ্ডা রেখে টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক যেভাবে ম্যাচ ফিনিশ করে আসেন, তাতে তার মধ্যে মহেন্দ্র সিং ধোনির ছবি দেখতে পেয়েছে পত্রিকাটি। তাইতো শিরোনামেও ‘ক্যাপ্টেন কুল’কে টেনে এনেছে এভাবে, ‘মুশি যেন বাংলাদেশের এমএসডি! একেবারে অভিজ্ঞ ফিনিশার।’
ব্যাট করা সময় এদিন সৌম্যর সঙ্গে প্রত্যেকটা বলের পর কথা বলছিলেন মুশফিক। তা নিয়ে বললেন, ‘প্রত্যেক ওভারে ১৫-২০ রান তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চেয়েছি। কিন্তু স্পিনারদের মারাটা কিছুটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। আমি দেশের হয়ে সব ম্যাচেই নিজের সেরাটা দিতে চাই।’
মাহমুদউল্লাহর নামও লেখা রইল ইতিহাসে। তার নেতৃত্বে ভারতের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি প্রথম জয় এলো বাংলাদেশের। অধিনায়কের কথায়, ‘আমি প্রথমেই কৃতিত্ব দেবো বোলারদের। ভারতের মতো দলকে ১৪৮ রানে আটকে রাখা গেছে। ফিল্ডিংও খুব ভালো হয়েছে। এগুলো সবই আমাদের বাড়তি প্রেরণা দিয়েছে ব্যাটিং করার সময়। যখন পুরো দল ভালো খেলে তখন অধিনায়কের কাজ সহজ হয়ে যায়। মুশি আর সৌম্যর পার্টনারশিপটাই আমাদের জিতিয়ে দিল।’
অন্যদিকে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেছেন, ‘ওরা জেতার মতোই খেলেছে। আমাদের মনে হয়েছিল ১৪৮ রানটা ডিফেন্ড করা যায়। কিন্তু আমাদের ফিল্ডিং ও বোলিং প্ল্যানিং অনুযায়ী হয়নি। ম্যাচে তা হতেই পারে। ছেলেদের অভিজ্ঞতার অভাব একটা ফ্যাক্টর হয়েছে। আবার দেখা গেল, এই ফরম্যাটে মিডল ওভারগুলোতে চাহালের বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।’