ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ড পেসার টিম সাউদির বাউন্সারে আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। তারপর থেকেই বাউন্সার নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেট এবং বাউন্সার অস্ত্র নিয়ে আইসিসিকে নতুন করে ভাবতে হবে। আবার কেউ বলছেন, ক্রিকেটে বাউন্সার নিষিদ্ধ করা হবে দুর্ঘটনার ভয়ে রাস্তায় গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করার মতো।
নিউজিল্যান্ডের সাবেকরাও বাউন্সার বিতর্কে বিভক্ত। বাউন্সার নিয়ে নতুন করে ভাবার পক্ষে কিউইদের সাবেক কোচ ওয়ারেন লিস। তবে খেলোয়াড়ি জীবনে একবার বাউন্সারে গুরুতর আহত হলেও তা নিষিদ্ধের মোটেই পক্ষে নন ল্যান্স কেয়ার্নস।
১৯৮৫ সালে নিজ দেশেই পাকিস্তানি পেসার ওয়াসিম আকরামের বলে আহত হলেও কেয়ার্নস বাউন্সারের পক্ষে।
নিউজিল্যান্ডের ডোমিনিয়ন পােষ্টকে তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য কেউ রাস্তায় গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করতে পারে না। শর্ট বোলিং একজন বোলারের অস্ত্রাগারের অংশ যা আগেও ছিল এবং আইনের মধ্যে থেকে তাদের সেটা ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেয়া উচিত।
তবে সাবেক নিউজিল্যান্ড কোচ ওয়ারেন লিস শর্ট পিচ বোলিংয়ে পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, এজন্য আম্পায়াদের আরও অনমনীয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
দৈনিক ওটাগো টাইমসকে তিনি বলেন, শর্ট বোলিং খেলার অংশ এবং সবসময় তাই ছিল; কিন্তু এটা খুব বেশি দূরে চলে গেছে। এটা শুধু ব্যাটসম্যানদের হাসপাতালে পাঠিয়েছে বলে না, এটা কিছু সময়ের জন্য আমাকেও ভাবিয়েছে।
লিস বলেন, এটা খুবই বিপজ্জনক জিনিস। শুধু ব্যাটসম্যান না, যখন একজন পেসার আরেকজন পেসারের সামনে ব্যাট করতে যান তিনিও একইরকম সমস্যার মুখে পড়েন।
২০১৪ সালে বাউন্সারের আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ফিল হিউজের প্রসঙ্গ টেনে ল্যান্স কেয়ার্নস বলেন: ক্রিকেট শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ বাউন্সার দেয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট ডন ব্র্যাডম্যানকে আটকাতে ১৯৩০ সালেতো বাউন্সারকেই প্রধান অস্ত্র করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু হিউজের মৃত্যুর খবর ছাড়া আর কিছু শুনেছেন আপনি?
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনিরাপদ হেলমেট ব্যবহার বন্ধ করছে আইসিসি। সেকথা উল্লেখ করে সাবেক এই কিউই ব্যাটসম্যান বলেন, বাউন্সারই যদি নিষিদ্ধ হয়, তাহলে হেলমেট ব্যবহারের আইন করে লাভ কি? কেনই বা এটা করা হচ্ছে?
বাউন্সারের কৌশল নিয়ে সাবেক কোচ লিস বলেন, বাউন্সার ছাড়াও ব্যাটসম্যানকে আটকানোর জন্য বােলারদের অনেক অস্ত্র আছে। আর বাউন্সারে যে বােলাররা খুব উইকেট পান সেটাও না। তাই এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আম্পায়ারদের আরও সচেতন হতে হবে।
সাবেক খেলােয়াড়দের মতো মুশফিকের ঘটনায় বিভক্ত নিউজিল্যান্ডের মিডিয়াও। টেস্টের পরেরদিন নিজেদের বড় জয়ের খবরেও নিউজিল্যান্ডর বেশিরভাগ পত্রিকা মুশফিকুর রহিমের আহত হয়ে স্ট্রেচারে এবং আ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যাওয়ার ছবি ছেপেছে। আবার বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের বাউন্সার দুর্বলতা নিয়ে খোঁচা দিতেও ছাড়েনি কিছু মিডিয়া।
একইসঙ্গে বাউন্সার সামলানোর ক্ষেত্রে মুশফিকের কৌশলের সমালােচনা করেছেন ল্যান্স কেয়ার্নস।
সাউদির বাউন্সারে আহত মুশফিকের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তবে হাতের আঙ্গুলে এখনো ফোলা ও ব্যাথা রয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে তার খেলার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি।