আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিষ্ঠিত মডেল আসিফ আজিম। তার শুরুর পদক্ষেপটাও নিশ্চয়ই খুব বড় কিছু ছিলো না। এবার ফেসবুকে তার উঠে আসার গল্পই শোনালেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এনায়েত কবির।
ফেসবুকে এক পোষ্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমার অনুজতুল্য আসিফ আজিম এখন মুম্বাইতে প্রতিষ্ঠিত মডেল। প্রচুর পরিশ্রমী এই ছেলেটি অভিনয়শিল্পী হবার অপেক্ষায় আছে। ২০০১ -এ মডেল ও কোরিওগ্রাফার তামান্নার সঙ্গে সে এসেছিলো আমার কাছে। শাহরুখ শহীদ (হেনরিজ হেরিটেজ) আর আমি তখন ফ্যাশন ও টেক্সটাইল ধারণা বদলে দিতে শুরু করেছি এই দেশে। শাহরুখ প্রিন্ট আর এমব্রয়ডারিতে স্থানীয় নকশায় উদ্ভাবনী চিন্তার প্রতিফলন রেখেছিলো। আর আমরা করছিলাম ওয়ারিং আর্ট ও উইভিং -এ নিত্যনতুন উদ্ভাবন। শিল্পী তরুণ ঘোষ, কাজী রকীব, মাসুদা কাজী, মৃদুল, মেহেদি, স্বপন ওয়ারিং আর্ট-এ অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। উইভিং -এ রঘুনাথ বসাক ও রতন বসাক আমার কতো অত্যাচার যে সয়েছেন।
আমি কনসেপ্ট ডিজাইন- এ অসংখ্য শিরোনামে প্রদর্শনী করেছি। আমার ভূমিকা নেপথ্য। ‘মানুষের কথা, রঙের ভাষায়’ শিরোনামে ব্যাপক পরিসরের এক প্রদর্শনীর আগে ঘরোয়া র্যাম্প-এ আসিফ আমার কাছে সুযোগ চাইলো। কিন্তু র্যাম্প এবং ফটোসেশনে ঘটলো বিপত্তি। সে সহমডেলের(নারী) হাত ধরতেও অস্বস্তি বোধ করেছিলো।
এরপর লেখক এনায়েত কবির আরো লিখেছেন, বিবি রাসেল আমাদের প্রতিটি ঘরোয়া র্যাম্প-এ উৎসাহ দিতে আসতেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সুবর্ণা মুস্তফা, শাকিলা জাফর, সাদিয়া ইসলাম মৌ, তারিন, বিজরী বরকতুল্লাহ, বন্যা মীর্জা, সুমাইয়া শিমু, মেহরীন, সঞ্জীব চৌধুরী, শামস সুমন সৌজন্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আমাদের পোশাক পরে।
দেশী পোশাকের ব্র্যান্ড ও ডিজাইনারদের প্রসারে বিচিত্রার পরে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রথম আলো ও নকশা। আসিফের প্রথম ব্রেক হয় নকশাতেই, বলা বাহুল্য আমার ডিজাইন করা পোশাক পরে। আমি ওই সময় আসিফ, রিনি, টুম্পাদেরকে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চাইতাম। পরামর্শ দিতাম। আমার ধারণা ছিল এদের সেই যোগ্যতা আছে। আসিফ পেরেছে।
১২ বছর হলো ফ্যাশন আর ডিজাইন থেকে ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। ২৬ অক্টোবর মুম্বাই গিয়েছিলাম। এয়ারপোর্টে নামতেই আসিফ ফোন দিলো। পরের দিন নিয়ে গেল আরব সাগরের পাশে হোটেল তাজ-এ ডিনার আমন্ত্রণে। বান্দ্রাতে ওকে চেনে সবাই। ডিনার শেষে আরব সাগরের বিচ- এ গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ও নামিয়ে দিয়ে গেল অর্কিড হোটেলে।
যে তিন দিন ছিলাম প্রতিদিন-ই সে এসেছে। পরিচিতদের বলেছে ‘আমি তাকে মডেল বানিয়েছি।’
সবশেষে এনায়েত কবির লিখেছেন, ‘তাজ এর সুইমিং পুলে ডিনারের ফাঁকে বসেছি। কোন ফাঁকে ও দিলো ছুট। একটা বিড়াল জীবিত কবুতর মুখে নিয়ে চলেছিল। কবুতরটা বাঁচাতে ওর কি চেষ্টা। এই মানুষ আসিফ আরও বহুদূর যাবে আমার কোনও সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ নিয়ে ও অনেক কিছু ভাবে। ওর ভাবনাগুলো বাস্তব হোক।
ছবিগুলো আমার সহযাত্রী আহসানুল হক তুলেছেন তাজ-এর রেস্টুরেন্ট ও মূল ফটকে। আসিফের জন্য আমার গর্ব অনেক। ১০ বছর পরে ওকে দেখলাম। ওর মাথায় আমার হাত থাকবেই।’