মুম্বাই (ভারত) থেকে: আফসোস, মুম্বাইয়ে আসার আগে নিজস্ব পরিকল্পনায় যা যা ছিলো তার কোনো কিছুই যেনো করতে পারছি না। উল্টো দৈনন্দিন পরিকল্পনায়, কাজের তালিকায় ঢুকছে নতুন নতুন সব বিষয় আশয়। আসলে এখানে আসার দিন থেকেইতো এমন হচ্ছে। কে জানতো স্বপ্নের শহরে এসেই হোটেল নিয়ে এমন বিড়ম্বনা পোহাতে হবে। হবে এতোটা তিক্ত অভিজ্ঞতা!
যা হোক, পেছন ফিরে আর তাকানোর ইচ্ছা নেই। এমনিতেই এটা নিয়ে অনেক ব্যস্ততায় কাটছে। ব্যস্ততা বেড়ে গেছে ফোনেরও। দেশ থেকে বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, পরিবারের লোকজন সবাই অনবরত খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
ফোন আসাটা শুরু হয়েছিলো প্রথমদিন রাত থেকে। আমাদের নিউজ এডিটর জুয়েল ভাই (চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক ও চ্যানেল আইঅনলাইনের এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান) এর ভারতীয় বন্ধুরা (স্থানীয় সাংবাদিক) আমাকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছেন। সাহস যুগিয়েছেন। তাদের কিছুক্ষণ পরই ফোন করে কথা বলেছেন মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার সামিনা নাজ। অনেকক্ষণ কথা বলেন তিনি। এখানে যে একটি বাংলাদেশ মিশন রয়েছে তা আগে জানতামই না।
যা হোক বৃহস্পতিবার ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দিনই সকালে সামিনা নাজের পক্ষ থেকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ পেলাম। ফোন করলেন মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি মিশনের কাউন্সিলর রাশেদুজ্জামান। সকাল বেলাই ফোন করে তিনি বলে দিলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা সব সাংবাদিককেই আসতে হবে, ম্যাডাম দাওয়াত করেছেন। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটা সন্ধ্যায় হওয়ায় দুপুরে দাওয়াত খেতে আপত্তি নেই কারো।
একটু বলে রাখি, মুম্বাইয়ে আমাদের টিমটা (বাংলাদেশ মিডিয়া) ১০ জনের। সঙ্গে রয়েছেন আমার অনেক পছন্দের কলিগ যমুনা টেলিভিশনের স্পোর্টস রিপোর্টার তাহমিদ অমিত। রয়েছেন মাছরাঙ্গা টিভির ক্রীড়া প্রতিবেদক শাকের রোবেন ভাই ও জনকন্ঠের মিঠুন আশরাফ ভাই। বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোরের মুহিবুর রহমান, আমরা যাকে হিল্লোল ভাই নামে ডাকি।
দশ জনের দলে আরও আছেন যমুনা টিভির ক্যামেরাপার্সন আলমগীর হোসেন এবং বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোরের শোয়েব মিঠুন। দৈনিক আমাদের সময়ের মিজবাউল হক এবং রেডিও টুডের সৌরভও এই ট্যুরে আমাদের সঙ্গী। আর ‘ওয়ান এন্ড ওনলি’ গাজী টেলিভিশনের ভারপ্রাপ্ত স্পোর্টস ইনচার্জ এবং জনপ্রিয় রেডিও জকি তায়্যিব অনন্তের কথা না বললেই নয়, কারণ আমাদের ‘মুম্বাই ট্র্যাজেডির’ (হোটেল বিড়ম্বনা) পোস্ট দিয়ে ফেসবুক শেয়ারিংয়ের নতুন রেকর্ড গড়ার পথে তিনি।
তিনটা ট্যাক্সি করে রওনা দিলাম আমরা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বিপরীতে পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটাই মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন রাশেদুজ্জামান ভাই, তিনিই আমাদের নিয়ে গেলেন সামিনা নাজের রুমে। পরে সামিনা নাজ কথা বলেছেন, খাবার টেবিলে বসে। ফোনেতো আগেই বলেছেন, এবার সামনা সামনি সমবেদনা জানিয়ে দিলেন মিসেস নাজ। গল্পে গল্পে তিনি জানালেন মুম্বাইয়ে মিশন করার সংগ্রামের অনেক কথা।
দু’বছর হলো এখানেই কাজ করছেন তারা। মিসেস নাজ এবং মিস্টার রাশেদুজ্জামানসহ এই অফিসে মোট তিনজন বাংলাদেশি। বাকিরা ভারতীয় নাগরিক। কথা চলতেই থাকলো, বেলা গড়িয়ে কখন যে ঘড়ির কাটা চারটার আশপাশে চলে এসেছে। এবারতো খাবারের পালা। পরিচিত গন্ধ নাকে আসতে লাগলো। পাশের টেবিলে তাকিয়ে দেখি সব পরিচিত খাবারের আয়োজন। সামনে সাজানো হচ্ছে গরুর মাংস ভুনা, পোলাও, গরম পরটা আর ফ্রাইড চিকেন। এসব রেখে কি আর আলাপ জমে! সব শেষে রসমালাই। যেনো কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার থেকে আনা।
ওয়ার্ল্ড টি-টুয়েন্টি কাভার করতে দেশ থেকে আমরা এসেছি প্রায় চার সপ্তাহ হতে চললো। ভারতীয় খাবার খেতে খেতে একঘেয়েমি লাগছিলো সবার। একপ্রকার হামলেই পড়লাম সবাই।
তবে খেতে খেতে এটি নিশ্চিত হলাম, ভবিষ্যতে আর কোনো বাংলাদেশি মুম্বাইয়ে এসে হোটেল না পেলে হয়রানির শিকার হবেন না। সামিনা এবং রাশেদুজ্জামান আমাদেরও এই গ্যারান্টি দিয়েছেন। কারণ এই বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে কাজ করছে সামিনা নাজের মিশন। তিনিই বিষয়টি পৌঁছে দিয়েছেন তার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে। দিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
ভারতে নাকি সব কাজই একটু ধীরলয়ে হয়। আমরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম কবে নাগাদ হবে এর সমাধান। আশ্বাস মিলেছে যতো দ্রুত করা যায়। আর অগত্যা যদি এই সমস্যা লেগেই থাকে তবে মুম্বাইয়ে ডেপুটি হাইকমিশন অব বাংলাদেশ অন্তত এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, কেউ এসে যদি হোটেল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তাহলে প্রথমেই যেনো তাদের কানে খবরটি পৌঁছে।
মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের ঠিকানা: জলি মেকার, বাংলো -০৮, কাফ প্যারেড, মুম্বাই। আরও সহজ উপায় হলো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ঠিক রিপরীত দিকে তাকালেই আপনার চোখে পড়বে পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। আহ বিদেশের মাটিয়ে এই দৃশ্য কেনো এতো ভালো লাগে! অদ্ভুত এক ভালো লাগা।