মিরপুর থেকে: সিলেটের নয়নাভিরাম কাননে ক্রিকেটপিপাসুদের মাতিয়ে হোম অব ক্রিকেটে ফিরেছে বিপিএল মহাযজ্ঞ। মিরপুরে উন্মাদনার সেই পারদটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলেন মুমিনুল হক। শনিবার ঢাকায় প্রথম ম্যাচে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখল বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের বাহারি সব শট। মুমিনুল, মুমিনুল গর্জনের মাঝেই রাজশাহী প্রথম জয়টা নিয়ে ফিরল ৮ উইকেটে।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৪ রান তোলে মাশরাফীর রংপুর রাইডার্স। জবাবে লেন্ডল সিমন্সকে নিয়ে শতরানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে ম্যাচ একেপেশে করে দেন জাতীয় দলে রঙিন পোশাকে ব্রাত্য মুমিনুল। তাতে ২০ বল হাতে রেখেই প্রথম জয়ে নোঙর ফেলে রাজশাহী।
উদ্বোধনীতেই ১২২ রান যোগ করেছেন কিংসের দুই ব্যাটসম্যান। প্রতিপক্ষ স্লো আর নিচু বাউন্সের যে উইকেটে ভুগেছে, কিছুপরেই সেখানে ঝলমলে সব শটের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন মুমিনুল ও সিমন্স। দলকে জয়ের দুয়ারে রেখে ব্যক্তিগত ৫৩তে রানআউটে কাটা পড়েন ক্যারিবীয় তারকা সিমন্স। চার চার ও এক ছয়ে ৫০ বলের ইনিংস তার।
টাইগার তারকা শেষপর্যন্ত থাকলেন। তার ছয়ে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসটি ৬৩ রানের। যাতে মিশে থাকল সব ক্রিটেটীয় শটের পসরা। আক্রমণাত্মক মুমিনুল এদিন ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৪৪ বলে গড়েন দেড়শর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটের ইনিংসটি। ফিফটি ৩৪ বলে।
মুমিনুল অবশ্য সাজঘরে ফিরতে পারতেন ১ রানেই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মাশরাফীর শর্ট বলে ডিপস্কয়ার লেগে ভাসানো তার ক্যাচটি ফেলেছেন অপু। পরে বোলিংয়ে এলে অপুকেও ওভার বাউন্ডারি মেরে জ্বালা বাড়িয়েছেন মুমিনুল। তার আগে মাশরাফীর একটি ওভারে এক ছয়ের সঙ্গে দুই চারের নাচন তুলেছেন মারতে পারেন না বলে টেস্ট স্পেশালিস্টের তকমা পাওয়া এই বাঁহাতি।
যাতে চার ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য একটা দিন গেছে রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফীর।
মাশরাফীর দল অবশ্য প্রথমঅর্ধেই ম্যাচটা অনেকটা হাতছাড়া করে এসেছে চার-ছক্কার ক্রিকেটের হিসেব মেলাতে না পেরে। চার-ছক্কার খেলা। সেটাতে আরও গতি আনতে বাউন্ডারির ঘের কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু মাঠের খেলায় ফলটা মিলল না রংপুরের। তাদের ইনিংস শেষ হয়েছে ছোট বাউন্ডারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোনো ছোট সংগ্রহ নিয়েই।
শুরুতে ছোট সংগ্রহের জন্য রংপুরের ব্যাটসম্যানদের একক দোষ দেয়া যাচ্ছিল না! হোম অব ক্রিকেটের যে উইকেটে ব্যাট করল রংপুর রাইডার্স, সেটি আচরণে শুরু থেকেই স্লো, সঙ্গে নিচু বাউন্স, ব্যাটসম্যানদের বেগ পেতে হল বেশ! পরে যদিও একই উইকেটকে বাড়ির উঠোন বানিয়ে ভুল ভাঙালেন মুমিনুলরা। সময়ের সঙ্গে তাই ধারণাও পাল্টাল!
কিন্তু তার অনেক আগেই লেখা হয়ে গেছে রংপুরের ভাগ্য। তাদের সংগ্রহটা ভদ্রস্থ জায়গায় গেছে রবি বোপারার ফিফটির কল্যাণে। ১৩৪ রানে দল থেমেছে, বোপারাকে থামানো যায়নি। রাজশাহীর বোলারদের বিপক্ষে লড়ে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ৩ চার ও ২ ছয়ে ৫১ বলের ইনিংস সাজিয়ে।
বাকিদের মধ্যে বলার মত সংগ্রহ কেবল শাহরিয়ার নাফিসের, সেটিও আবার চাদিহার উল্টো গতিতে তোলা ৩১ বলে ২৩। শেষদিকে জিয়াউর রহমান এক ছয়ে ১১ বলে অপরাজিত থাকেন। শুরুতে জোনাথন চার্লস ২, অ্যাডাম লিথ ২, মোহাম্মদ মিঠুন ১৮, থিসারা পেরেরা ৪ রানে ফিরেছেন।
কিংসদের ইনিংসে ফরহাদ রেজা ২ উইকেট নিয়ে সেরা। মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ ওভারে ১৯ রানে এক উইকেট পুরেছেন ঝুলিতে।