একটা করে দিন গড়াচ্ছে, এগিয়ে আসছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। মিরপুরে পুরোদমে চলছে ফিটনেস-স্কিল অনুশীলন। সঙ্গে প্রাথমিক স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা একেকদিন একেকজন সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে জানিয়ে যাচ্ছেন দলীয় ও ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা। সেখানে ব্যক্তিগত লক্ষ্যে ভিন্নতা থাকলেও দলীয় প্রসঙ্গে আবার সকলেই একাট্টা- সিরিজ জয়। মঙ্গলবার মুমিনুল হকও স্বপ্নের পরিধিটা চওড়াই করে গেলেন, অস্ট্রেলিয়াকে যে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার সংকল্পই গাঁথছেন সাদা পোশাকের দলের এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
খানিক আগেই সৌম্যর সঙ্গে জুটি বেধে নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। মুমিনুল যখন কথা বলতে এলেন, তখনো চোখেমুখে অনুশীলন-অনুশীলন একটা ঘোর! কিছু একটা হয়ত ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়। হয়ত ভাবছিলেন, ওই শটটা কেন ওভাবে খেলতে পারলেন না! আত্মজগতে বিশ্লেষণের এক ফাঁকেই প্রশ্ন ছুটে আসে, অজি সিরিজের লক্ষ্য নিয়ে। মুমিনুল দ্রুতই বাস্তবে ফেরেন, ‘আমরা শেষ যে কয়টা টেস্ট খেলেছি, সে অনুযায়ী খেললে আমার মনে হয় দুইটা ম্যাচই জিতব। ১-১ হলেও ভালো! কিন্তু আমার কাছে মনে হয় দুটাই জিতব। টেস্ট আগের চেয়ে অনেক ভালো খেলছি আমরা। জেতার উচিত।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে নিজেদের শততম টেস্টে জয়। নিউজিল্যান্ড ও ভারতের মাটিতে পঞ্চমদিন পর্যন্ত লড়াই। নিকট অতীতের এসব চিত্র বলে দেয় টেস্টেও টাইগারদের দিন বদলের কথা। মুমিনুল সেসব থেকেই আত্মবিশ্বাসের রসদ পাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর।
কিন্তু অজি-বধ কি সহজ হবে? অন্তত ইংল্যান্ড সিরিজের চেয়ে কঠিন হবে বলেই মনে করছেন মুমিনুল। অজিদের সমৃদ্ধ পেস ও স্পিন আক্রমণ আর ব্যাটিং গভীরতা, সঙ্গে উপমহাদেশের কন্ডিশনে স্মিথদের সহজেই মানিয়ে নেওয়া বিষয়টি তো থাকছেই; সেটাই এভাবে ভাবাচ্ছে টাইগার বাঁ-হাতিকে।
‘ওরা পেস বোলিংয়ে ভালো, স্পিনেও। যেকোনো কন্ডিশনে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। এটা চ্যালেঞ্জ হবে। আমার কাছে মনে হয় ইংল্যান্ড সিরিজের চেয়েও কঠিন হবে। ইংল্যান্ড আমাদের দেশে খেলার আগে ভারতে খেলেনি। অস্ট্রেলিয়া কিছুদিন আগেই ভারতে খেলেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছে। ওরা এই কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হয় জানে। আমাদেরও ওভাবেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
জাতীয় দলের হয়ে শুধু টেস্ট খেলেন মুমিনুল। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ তাই সীমিত। দীর্ঘ সময় বিরতি দিয়ে মাঠে নামা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই কঠিন। মুমিনুল সেটা ভালোভাবেই বোঝেন। আবার বাস্তবতাটাও মেনে নিতে শিখেছেন, ‘একটু কঠিন হয়। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা সেভাবে বুঝতাম না, এখন বুঝি। তারপরও চেষ্টা করি এসব মাথায় না আনতে। আপনারাও ব্যাপারটা সামনে না আনলে আমার জন্য ভালো।’
জুনে শেষ হওয়া প্রিমিয়ার লিগে মুমিনুল খেলেছেন ১৬টি ওয়ানডে ম্যাচ। এখন চেষ্টা করছেন টেস্টের মানসিকতা ফিরিয়ে আনার, ‘আমরা যেহেতু টেস্ট প্লেয়ার, টেস্টের মানসিকতা নিয়ে কাজ করছি। সেশন-বাই-সেশন কীভাবে ব্যাটিং করা যায়, শুরুতে গিয়ে কীভাবে ব্যাটিং করা যায়, পুরোপুরি টেস্ট মানসিকতা সেট করে ব্যাটিং করা যায়, সেসব নিয়ে চেষ্টা করছি।’
মুমিনুল জানেন, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে ব্যাট হাতে তার করার থাকবে অনেককিছুই। মানসিক প্রস্তুতিটাও নিচ্ছেন সেভাবেই, ‘টেস্ট খেলতে হলে ৫০-৬০ করলে হয় না। একটা টিমের জন্য ৬০-৭০ কাজে দেয় না। আপনি যদি ১০০ করেন, সেটা টেনে দেড়শ পার করেন, তাহলে দলের কাজে লাগে। সেভাবে খেলার মানসিকতা নিয়েই অনুশীলন করছি।’