চট্টগ্রাম থেকে: সকাল থেকেই স্পিনে মিলেছে টার্ন। পেস বোলাররা বাড়তি বাউন্স, মুভমেন্ট পেতে শুরু করেন দুপুরের পর। বল পড়ে উইকেটের মাটি থেকে তখন উড়ছে ধুলোও। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ২২ গজ যে বোলারদের জন্য স্বর্গভূমি সেটি না বললেও চলে। এমন উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর টেস্টে ৮ উইকেট হারিয়ে তিনশ পার করে প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ-৩১৫/৮ (তাইজুল ৩২*, নাঈম ২৪*) (প্রথম দিন শেষে)
চা-বিরতির পর দিনের শেষ সেশনের শুরুতে গ্যাব্রিয়েল-তোপে ১৩ রানের মধ্যে দ্রুত মিডলঅর্ডারের ৪ উইকেট না হারালে দিন শেষে আরও ভারো করেই চালকের আসনে থাকত পারত বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির দিনে হতাশা হয়ে থাকল মুশফিকুর রহিম (৪) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (৩) দ্রুতলয়ে সাজঘরে ফেরা। দুজনই আউট হয়েছেন ডানহাতি পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের অফস্টাম্পের বাইরে পিচ করা ইনসুইং ডেলিভারিতে।
১২০ রানের ইনিংস খেলা মুমিনুল একই মাঠে টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন। এ বাঁহাতির উইলো থেকে আসা আটটি সেঞ্চুরির ৬টিই বন্দরনগরীর এ ভেন্যুতে।
২৫৯ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তিনশ পার করে দুই বোলার নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের ব্যাটিং দৃঢ়তায়। নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে তারা যোগ করেছেন ৫৬ রান। অফস্পিনার হিসেবে অভিষিক্ত নাঈম ২৪ রান করে জানান দেন ব্যাটিং সত্ত্বার।
দু’বার রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যাওয়া তাইজুল ৩২ রান করে আছেন অপরাজিত। পড়ন্ত বিকেলে দুই স্পিনার মিলে প্রতিরোধ গড়ে চা-বিরতির পর ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশের ইনিংস মেরামত করছেন।
ইমরুল কায়েস ৪৪, সাকিব আল হাসান ৩৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ২২, মোহাম্মদ মিঠুন করেন ২০ রান। কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি।
সফরকারী পেসার গ্যাব্রিয়েল নেন ৪ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকেন নেন ২টি উইকেট। কেমার রোচ ও দেবেন্দ্র বিশু নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
সকালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে সৌম্য সরকারের (০) উইকেট হারালেও মুমিনুল ও ইমরুল মিলে ১০৪ রানের জুটি আনেন। তাতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় বড় সংগ্রহের ভীত। লাঞ্চ বিরতির আগের ওভারে ইমরুল উইকেট বিলিয়ে সাজঘরে ফেরেন। মিঠুন, সাকিবও থিতু হয়ে ফেরেন সাজঘরে। মিডলঅর্ডারে বাংলাদেশের হঠাৎ বিপর্যয় না আসলে দৃঢ় অবস্থানে থাকতে পারত।
ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের পথে এদিন কাঁটা হয়ে দাঁড়ান মুমিনুল। ১৬৭ বলে ১০টি চার ও একটি ছক্কায় সাজান ইনিংস। ডন ব্র্যাডম্যান তার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে। বর্তমান ব্যাটসম্যানদের জন্য সে পথে হাঁটার চিন্তা করাও কঠিন। যদি একটি মাঠে কারও গড় ব্র্যাডম্যানের কাছাকাছি বলা যায়, তাহলে সে নামটি অবশ্যই মুমিনুল।
সাগরিকায় ৮ টেস্ট খেলে ১৪ ইনিংসে করেছেন ৯৮৯ রান। মুমিনুলের গড় এখানে ৮৯.৯০। দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে হাজার রানের সামনে এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। হাজার রান স্পর্শ করা একমাত্র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম (১০৯৬)।
বৃহস্পতিবারের সেঞ্চুরিটি নিয়ে এবছর মুমিনুলের সেঞ্চুরি হলো চারটি। বাংলাদেশের হয়ে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডটি এখন মুমিনুলের। ২০১০ সালে তামিম করেছিলেন তিনটি। আর এ বছর চারটি সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহলির পাশে বসেছেন।