২০১০ সালের আগস্টে মুজাহিদকে আটকের পর ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আলবদর নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি বিচারের পরিসমাপ্তি ঘটলো।
আটক: ২০১০ সালের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে মুজাহিদকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরের ২৯ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে।
অভিযোগ গঠন: ২০১২ সালে ২১ জুন আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। বিচারে ওই অভিযোগগুলোর মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়: ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের মতো অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বাকি দুইটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল: এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট আপিল দায়ের করেন আসামীপক্ষ।
আপিল বিভাগে রায় বহাল: ২০১৫ সালের ১৬ জুন আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
যে তিন অপরাধে ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তার মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনার অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আলাদাভাবে সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুজাহিদকে অব্যাহতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আর ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বেঞ্চ । এছাড়া অন্য দুটি অপরাধে মুজাহিদকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ: এবছর ৩০ সেপ্টেম্বরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করা হয়।
রিভিউ আবেদন: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৪ দিনের মাথায় মুজাহিদের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
রিভিউ খারিজ: শুনানীর পর ১৮ নভেম্বর মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।
এরপর থেকেই শুরু হয় ফাঁসির ক্ষণগণনা।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা: ‘মুক্তিযুদ্ধ হয়নি’ বলা বদর নেতা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা ফাঁসির ক্ষণ ঘনিয়ে আসায় প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানায়।
ফাঁসি: তবে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আইন সচিব প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে শুরু হয় ফাঁসির চূড়ান্ত ক্ষণগণনা। অবশেষে রাত সাড়ে ১২ টার পরে অর্থাৎ ২২ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদকে।