যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণ প্রজন্মসহ দেশবাসীর
ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ২০০৮ এর ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এতে
কিছুটা অস্থির হয়ে উঠে জামায়াতে ইসলাম।
গ্রেফতার হওয়ার ৭ মাস আগে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে রাজধানীর বাইরে সফরে
যান জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ।
আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে পরের দিন তিনি ঢাকায় ফিরে
আসেন।
এখন পোড়ো বাড়িতে পরিণত হওয়া দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কখন,
কোথায়, কিভাবে হামলা হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও দাবি
করেন।
স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এসব অভিযোগ তুলে দেশকে বিভক্ত
করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
রিপোর্টার হিসেবে আমিও ছিলাম ওই সংবাদ সম্মেলনে। বললাম, গত ২৪ ঘণ্টায় আপনার উপর
কিভাবে হামলা হয়েছে তার প্রতিটির বর্ণনা দিয়েছেন দাড়ি, কমাসহ। আপনার স্মরণশক্তি বেশ প্রখর।
সেসময় মুচকি হেসে মুজাহিদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম। জানালাম, কিছুদিন আগে আপনি বলেছেন, ৭১ এর ৯ মাসের
কোনো কিছুই আপনার মনে নেই।
তখন দাম্ভিক মুজাহিদ তার আসন থেকে উঠে এসে আমার ডান
হাত ধরে উপহাস করে বললেন, তোমাকে কে বলেছে আমার কিছুই মনে নেই। ৭১-এ কোন
পুকুরে গোসল করেছি, কোন মাঠে ফুটবল খেলেছি সবই মনে আছে।
সাথে সাথে আমি
বললাম, এইসব আপনার ঠিকই মনে আছে; শুধু মনে নেই ৭১ এ আপনার করা অপকর্মগুলো।
গম্ভীর ও বিব্রত হয়ে নিজের আসনে ফিরে গেলেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ।
আমি এবং আরো কয়েকজন সাংবাদিক একাত্তর নিয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করতে চাইলে
জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান কিছুটা ধমকের স্বরে বললেন, এতো
একাত্তর, একাত্তর করো কেনো? একাত্তরে তো তোমাদের জন্মই হয়নি। একাত্তর ছাড়া
প্রশ্ন করা যায় না?
এর প্রতিবাদে আমরা সংবাদ সম্মেলন বর্জনের কথা বলে উঠে
দাঁড়ালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হাত জোড় করে ক্ষমা চান ও সবাইকে
বিনীতভাবে বসার অনুরোধ করেন।
বলেন, তিনি (সুবহান) আমাদের দলের বায়োজ্যেষ্ঠ নেতা।
তিনি আমাদের ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তার কথায় কিছু মনে করবেন না।
পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধে তার এবং দলের অন্য নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ
অস্বীকার করে দলীয় নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানি থেকে বিরত থাকার জন্য
সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মুজাহিদ।
কিন্তু পুরো সংবাদ সম্মেলনে একবারের জন্যও ৭১-এ
তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেননি এ জামায়াত নেতা। বরং আবারও উল্লেখ
করেন- বাংলাদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি; গৃহযুদ্ধ
হয়েছিলো।
ইতিহাস সাক্ষী যে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ফাঁসির মঞ্চই হচ্ছে মুজাহিদের চূড়ান্ত গন্তব্য।