‘‘আমার বাবাকে খুঁজে পাচ্ছি না, আমার বাবাকে আপনারা ফিরিয়ে দিন’’ মঙ্গলবার দুপুরে মুজাহিদের পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ভাড়া বাসায় এভাবেই কান্নাভেজা চোখে চ্যানেল আই অনলাইনকে কথাগুলো বলছিল নিখোঁজ মুজাহিদুর রহমানের বড় মেয়ে মুমতাহিনা রহমান মারিয়া (৮)।
বড় মেয়েটি স্পষ্ট করে তার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানালেও ছোট মেয়ে মেহেরিমা রহমান মুমু (২) সারা বাড়ি জুড়ে বাবাকে খুঁজে বেড়ায়।
‘‘এদিক ওদিক তাকিয়ে বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকে, মুঠোফোনে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’’ বলেন মুজাহিদের স্ত্রী কামরুন নাহার লাকি।
গত ২৬ নভেম্বর (রোববার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মো. মুজাহিদুর রহমান বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফেরেন নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক।
মুজাহিদের স্ত্রী কামরুন নাহার লাকি তার স্বামী নিখোঁজের বিষয়ে গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
২৬ তারিখের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কাশিমপুর কারাগারে বিউটিশিয়ানের কাজ করি, অফিসে যাওয়ার আগে মুজাহিদ ঘুমিয়ে ছিল। পরে বড় মেয়ের কাছে জেনেছি বাসা থেকে বের হয়ে ওকে স্কুলে দিয়ে চলে যায়।’
মুজাহিদের সঙ্গে শেষ কথা ২৬ নভেম্বর রাতে হয় জানিয়ে বলেন, ‘রাতে ফোন দিয়ে আমাকে বলেছিল আজ আসার কথা থাকলেও আসতে পারছি না, আগমীকাল আসব, বিদেশ থেকে মামার কাছে বড় ভাইয়ের পাঠানো টাকা নিতে মুন্সীগঞ্জ এসেছি। পরদিন সকালে মুজাহিদের মুঠোফোনে রিং হলেও তা ধরে নি।’
কামরুন নাহার বলেন, ‘২৮ নভেম্বর রাতে মুজাহিদের বড় বোন মণি ফোন দিয়ে জানান, মুজাহিদ মামার বাসা থেকে ৭০ হাজার টাকা বের হয়, ওইদিন দুপুর দেড়টায় মুজাহিদ মামাকে জানায় গুলিস্তান পৌঁছে গেছি। এর আগে দুপুর সাড়ে বারোটায় আমার দুলাভাই মুজাহিদকে ফোন দিলে বলেছিল মুন্সীগঞ্জ আছি।বিকেলের ভেতর বাসায় আসব।’
“তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই ফোন বন্ধ, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার বাড়িতেই খোঁজ নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোথায় মুজাহিদ যায় নি।”
জিডি করতে দেরি করলেন কেন জানতে চাইলে মুজাহিদের স্ত্রী বলেন, শুরুতে মনে করেছিলাম বন্ধু-বান্ধব বা কোন আত্মীয় স্বজনের বাসায় রয়েছে, মোবাইলে চার্জ নেই, তাই বাসায় ফোন দিতে পারছে না। পরে ২৯ নভেম্বর রাতে জিডি করি।
বেশ কয়েকদিন একটি মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন জানিয়ে কামরুন নাহার বলেন, ‘অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করছিল মুজাহিদ, বাসায় যতোক্ষণ থাকত লেখাপড়াই করত।’
কাউকে সন্দেহ করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও খুব হাসিখুশী প্রাণবন্ত ছিল, যেখানেই যেত সেখানেই মিশে যেত। ওর আচরণ ছিল শিশুসুলভ। কাউকে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। এছাড়া কারো সঙ্গেই আমাদের কোন ঝামেলা নেই।’
কেঁদে কেঁদে কামরুন নাহার বলেন, ‘আমি শুধু শুনতে চাই ও বেঁচে আছে, আর কিছু লাগবে না, ছোট মেয়ে বাবাকে দেখতে ছটফট করে, মুঠোফোনে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’
তবে স্বামীর রাজনৈতিক পরিচয় জানেন না বলে একাধিকবার এড়িয়ে যান কামরুন নাহার। বলেন, এ বিষয়গুলো আমার সঙ্গে ও কখনো আলোচনা করে নাই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১২ নভেম্বর মহাসমাবেশ উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ।” এই শিরোনামে ছবিসহ মুজাহিদকে ট্যাগ করে শেয়ার করা হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর একটি পোস্টে মুজাহিদ লিখেছিলেন, পারলে মারো, নইলে মরো। আর কত সহ্য করা যায়?????
পশ্চিম আগারগাঁওয়ের মিজান মসজিদ এলাকার স্থানীয়রা জানান, মুজাহিদ খুব কমই বাসা থেকে বের হতো। এলাকায় বেশি আড্ডা দিতেন না।
মুজাহিদের নিখোঁজের ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মুজাহিদের সঙ্গে তার মামার শেষ কথার সময় মুজাহিদ গুলিস্তান এলাকায় ছিল, আমরা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি, অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছে কিনা সেটিও দেখেছি কোথাও কোন খোঁজ পায়নি।
মোবাইল ট্র্যাকিং করেও তার অবস্থান নিশ্চিত করা যায় নি জানিয়ে তিনি বলেন, মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় ট্র্যাকিংয়ে সমস্যা হচ্ছে, আমরা তার কল লিস্ট ধরে ধরে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।