রেহানা মরিয়ম নূর হয়ে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসব মাতিয়ে এসেছেন আজমেরী হক বাঁধন। সেই সুবাধে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকর্মীদেরও। কথা বলতে হয়েছে রেহানা চরিত্রে তার প্রস্তুতি সহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে। ভিনদেশি সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হলেও ‘রেহানা’ চরিত্রটি নিয়ে দেশের সংবাদকর্মীদের সাথে করোনার কারণে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়নি।
অবশেষে সোমবার (১ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে সেন্সমেকার স্টুডিওতে সংবাদকর্মীদের সাথে বাঁধন প্রথমবার সরাসরি অংশ নিলেন এক অনানুষ্ঠানিক আড্ডায়।
জানালেন, কানে যাওয়ার কারণে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে সরাসরি ভিনদেশি সংবাদকর্মীদের নানান প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও করোনার কারণে সেসময় দেশীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ হয়নি। মুঠোফোন, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ইনবক্সে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
সিনেমাটি নিয়ে দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের সমর্থনকে এসময় কৃতজ্ঞচিত্তে উচ্চারণ করেন সিনেমার ‘রেহানা’কে বয়ে বেড়ানো বাঁধন। তিনি ছাড়াও এসময় এই অনানুষ্ঠানিক আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন রেহানা মরিয়ম নূর এর নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু, চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল, কাস্টিং ডিরেক্টর ইয়াসির হক সহ অনেকে। স্বভাবতই আড়ালে ছিলেন এই ছবির নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।
এসময় বাঁধন জানান, আগামী ১২ নভেম্বর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এখন পর্যন্ত ১২টি প্রেক্ষাগৃহ চূড়ান্ত হয়েছে। সিনেমাপ্রেমী সকলের উদ্দেশে বাঁধন আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই সিনেমাটির সাথে আমাদের বহু ত্যাগতিতিক্ষা মিশে আছে। আশা করবো সবাই বড় পর্দায় এসে সিনেমাটি দেখবেন।’
খোলামেলা আড্ডায় এদিন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এ দেয়া প্রথম অডিশন থেকে শুরু করে কানে যাত্রা পর্যন্ত অভিজ্ঞতার কথা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান বাঁধন। সেই সঙ্গে তিনি অতীত জীবনের বিষাদ দিনের গল্পও করেন।
জানান, ৩৮ বছরের এই জীবনে বহুবার তিনি পিছলে পড়েছেন। ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও হোঁচট খেয়েছেন বারবার। সেই হতাশা ও কষ্ট থেকে দুইবার আত্মহননের পথও বেছে নিতে চেয়েছিলেন। বাঁধনের ভাষ্য, ‘আমি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলাম। ২০০৫ সালের দিকে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। ২০০৬ সালে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতা জীবনের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে। সেখান থেকে সমর্থন পেয়েছি। নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
ব্যক্তিগত জীবনে উত্থান পতনে বাঁধন দমে যাননি, থেমে যাননি। বরং হোঁচট খেয়ে ছুটেছেন আরো দুরন্ত গতিতে। কাজের প্রতি তার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আত্মত্যাগ তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের সিঁড়িতে। যে সিঁড়ি ভেঙে ক্রমশই এখন তিনি হাঁটছেন উপরের দিকে!
গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আড্ডায় এদিন বাঁধন জানান, ‘আমার মেয়ে আমাকে হেরে যেতে দেখছে না, এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। আমার আশপাশের নারীরা যারা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে চায়, অনেকেই বলেন, আপু আপনি যখন কিছু অর্জন করেন, মনে হয় আমরা অর্জন করছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
কানে যোগ দেয়ার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় আজমেরী হক বাঁধন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর বদৌলতে বিশ্বখ্যাত হলিউড রিপোর্টার থেকে শুরু করে ডেডলাইন, ভ্যারাইটিসহ নামিদামি সংবাদ মাধ্যম ও সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। তাই বলে পা মাটিতেই রাখছেন এই অভিনেত্রী। তার উদ্দেশ্য এখন একটাই, ‘দেশের মানুষ সিনেমাটি দেখে কী বলে!’
দেশীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে সতস্ফূর্ত আড্ডায় এদিন বলিউডে ‘হায়দার’ খ্যাত নির্মাতা বিশাল ভরদ্বাজের সাথে ‘খুফিয়া’তে কাজের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন বাঁধন।