কোটা পর্যালোচনা কমিটির দেয়া প্রতিবেদন বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি সংগঠন।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরীতে কোটা বাতিলের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির দেয়া প্রতিবেদন বাতিলে আন্দোলন করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ।
রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন তারা। পরে সেখান থেকে স্মারকলিপি জমা দিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে যান মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা।
মিছিলটি শাহবাগ পর্যন্ত পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেখান থেকে ৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা মল্লিকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ৷
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন দাবি করেন কোটা পর্যালোচনার লক্ষ্যে যে কমিটি করা হয়েছে তাদের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে৷
বক্তব্যে তিনি বলেন, “সচিব কমিটি রিপোর্ট দিতে দুই-তিন মাস সময় নিলো। কারো সাথে আলাপ করলো না৷ হঠাৎ করে ঘোষণা দিলো কোনো কোটা থাকবে না। সচিব কমিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অপসারণ করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্রে মেতেছে৷ তাদের প্রতিহত না করে আমরা ঘরে ফিরবো না৷ আমার বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান হয়, এমন কিছু এই সরকার করবে না। মুক্তিযুদ্ধ ভোটের রাজনীতি বা ছলচাতুরীর কোনো বিষয় নয়। আশা করি, সরকার ছলচাতুরী করবে না।”
অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেছেন, কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত আবেগবশত ও সংবিধান সম্মত নয়।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের মূল টার্গেট ও মাথাব্যথা ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা৷ রাষ্ট্র যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে চায়, তাহলে সম্মানের সাথেই সম্মান দিতে হবে ৷ সংবিধানের আলোকে কোটার সমস্যাটা সমাধান করা সম্ভব৷ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তটা আবেগ-বশবর্তী হয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কোটা সংস্কার হতে পারে, কিন্তু বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংবিধানসম্মত নয়।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “কোটা পর্যালোচনা কমিটির কোটা বাতিলের সুপারিশ আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা প্রত্যাখ্যান করছি৷ পাকিস্তান আমলে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ পেতেন ৮ শতাংশ হারে৷ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ৯২ শতাংশ পদে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিয়োগ দেওয়া হতো৷ এই ৯২ শতাংশ বাঙালির অধিকার অর্জনে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকাই প্রধান৷ তাই বঙ্গবন্ধু জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন৷ এখন প্রাক-নির্বাচনী, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এই কোটা প্রয়োগ করা হয়৷ সবার সাথে সম-প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তাদের মেধাহীন আখ্যা দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। কোটা পর্যালোচনা কমিটির মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব কোটা বাতিলের সুপারিশ দেখে বোঝা যায় কোন চেতনার মানুষেরা প্রশাসনে বসে আছে।”
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ডাকা এই সমাবেশ থেকে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে:
১) সামাজিক মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
২) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৩) ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪) মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৫) স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও বংশধরদের চিহ্নিত করে সরকারি সব চাকরি থেকে বহিষ্কার, নাগরিকত্ব বাতিল ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত নিতে হবে।
৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।