সরকারের দুই বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক বিপথগামীদের বিরুদ্ধে তার সরকার প্রয়োজনে আরো কঠোর হবে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে কোনো কটাক্ষের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন।
‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কারও কোন কটাক্ষ সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তুলুন। আমরা আপনাদের পাশে আছি,’ জানানোর আগে প্রধানমন্ত্রী কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, একটি দলের নেত্রী ও তার নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি কটাক্ষ করেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করেছে।
‘আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। যারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে,’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির আসল উদ্দেশ্য হলো জঙ্গিবাদ উস্কে দেওয়া; যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের রক্ষা করা। ‘আমাদের ওয়াদা ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকর করা হচ্ছে, কেউই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না,’ বলে তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, জনগণ তাদের প্রতাখ্যান করেছে,’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পৌরসভা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছেন, জঙ্গি ও পেট্রোল বোমাবাজদের প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এই নির্বাচন ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ,’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন: আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি, সন্ত্রাস সহিংসতায় বাঙালি বিশ্বাসী নয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, হাজার বছর ধরে সব ধমের্র মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছেন। কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।
‘বিপথগামীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর হবো,’ বলেও সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন: আমি ২০০৮ সালে বলেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব।
গ্যালোপের হোপ ইনডেক্সেও কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ডের পরেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ। আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করার আশার কথা উল্লেখ করে অগ্রগতির সেই পথে দেশের মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন: আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করা, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে। গণতন্ত্র দিয়েছে। যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের উন্নয়ন করেছে।
‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আসুন, দল-মত ও বিভক্তির উর্ধ্বে উঠে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখি। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা। কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’