মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণে নাগরিক উদ্যোগে কাজ করছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট’। ট্রাস্টটি ২০০৭ সালে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র’ নামে মুক্তিযুদ্ধের বই-দলিল-ছবি-ভিডিও ফুটেজ-সংবাদপত্রের কাটিং-ডকুমেন্টারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে চলতি বছরের মার্চে ট্রাস্ট আইনের অধীন ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট’ নামে নিবন্ধিত হয়।
প্রথমে এই ডিজিটাল কনটেন্টগুলো শুধুমাত্র অফলাইনে সংরক্ষণ করা হলেও ২০১৪ সালের ০৪ মে পাঠকদের জন্য বিনামূল্যে পাবলিক রিডিং ও ভিউয়িংয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভে বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রায় ১,৫০০ বই-দলিল-সংবাদপত্রের কাটিং কনটেন্ট, প্রায় হাজার খানেক ছবি, কয়েকশো ভিডিও ফুটেজ ও ডকুমেন্টারি।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে আরো দুটো প্রকল্প- মুক্তিযুদ্ধ পাঠশালা এবং গবেষণা ও প্রকাশনা কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধ পাঠশালার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষা নিয়ে উন্মুক্ত কর্মশালা করা হয়। আর গবেষণা ও প্রকাশনা কেন্দ্র হতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা ধরনের প্রকাশনা বের করা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অফেন্ডিং জিয়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিবন্ধে আইন চায় ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পূর্ণ বিবরণ।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের ঠিকানাঃ www.liberationwarbangladesh.org
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ পাবলিক রিডিং ও ভিউয়িংয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে নানান বিষয় জানতে চ্যানেল আই অনলাইন কথা বলে মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা সাব্বির হোসাইনের সাথে।
চ্যানেল আই অনলাইনঃ কিভাবে এই ধরণের একটি জরুরি কাজ করার কথা মাথায় এলো?
সাব্বির হোসাইনঃ মুক্তিযুদ্ধের বই-দলিল পাঠকের কাছে সহজলভ্য নয়। এমন অনেক পুরোনো বই আছে যা কিনতে পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, প্রান্তিক পর্যায়ে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত পড়াশুনো করতে চায়, তার পক্ষে তা বেশ কষ্টসাধ্য। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষ; মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষণা, গণহত্যা, শহীদের সংখ্যা নিয়ে এই কুৎসিৎ পক্ষের রয়েছে নানান অপপ্রচার; এইসব অপপ্রচারগুলো তারা সৃষ্টি ও ছড়িয়ে দিতে পেরেছে শুধুমাত্র প্রান্তিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ-পাঠ সুলভ নয় বলেই। আর ঠিক এই জায়গাটুকু নিয়ে কাজ করছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-পাঠ সর্বস্তরে বিনামূল্যে সুলভ করে দেয়ার জন্য কাজ করছি। মুক্তিযুদ্ধের বই-দলিল-ডকুমেন্টারি-ফুটেজ সহ বিভিন্ন কনটেন্ট আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে সংরক্ষন করছি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোন স্থান হতে পাঠক এইসব কনটেন্ট বিনামূল্যে পড়তে ও দেখতে পারছে। ফলে, প্রান্তিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠপ্রাপ্তির যে শূণ্যতা, তা পূরণ হচ্ছে।
চ্যানেল আই অনলাইনঃ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের পদ্ধতিটি কি রকম?
সাব্বির হোসাইনঃ আমরা মুক্তিযুদ্ধের বই-দলিল-সংবাদপত্রের কাটিং-ছবি স্ক্যান করে তা ইবুক আকারে ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভিডিও ফুটেজ, ডকুমেন্টারি ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে সংরক্ষণ করি। আর অনলাইনে সংরক্ষণ করার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোন স্থান হতে পাঠক তা পড়তে, দেখতে পারেন। আর মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ এই সেবার জন্য পাঠকের কাছ হতে কোন অর্থ গ্রহণ করে না।
চ্যানেল অাই অনলাইনঃ এই কাজ করতে আপনাদের যে অর্থ ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, তা কিভাবে সংস্থান করেন?
সাব্বির হোসাইনঃ আমাদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হলো, আমরা সবকিছুর জন্য সরকারের দিকে মুখিয়ে থাকি যে, কখন সরকার এই কাজ করবে। আমাদের রাষ্ট্র উন্নয়নশীল দেশ; তাই, স্বাভাবিক কারণে আমাদের আর্থিক সার্মথ্য সীমাবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-পাঠ সংরক্ষণ ও জনগণের জন্য ব্যবস্থা করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই কিন্তু সরকার যখন তা নানান কারণে করতে পারছে না, তখন নাগরিকদের উচিত এগিয়ে আসা।
আর এই উপলব্ধি হতেই আমরা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। বই, ছবি, ডকুমেন্টারি ও ফুটেজ সহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-পাঠের বিভিন্ন কনটেন্ট আমাদের কিনতে হয়েছে, আবার অনেক সংগ্রাহক তা বিনামূল্যে আমাদের প্রদান করেছেন। লজিস্টিক বিষয় যেমন, স্ক্যানার, ক্যামেরা, ল্যাপটপ আমাদের কিনতে হয়েছে, আবার অনেকে স্বেচ্ছাসেবক নিজেদের লজিস্টিক ব্যবহার করে কনটেন্ট ডিজিটাইজড করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের যাবতীয় আর্থিক ব্যয় আমরা নিজেরাই বহন করার চেষ্টা করি কিন্তু যখন তা সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়, তখন অনেকে এগিয়ে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ বাংলাদেশে নাগরিক উদ্যেগের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হতে পারে বলে আমি মনে করি।
চ্যানেল আই অনলাইনঃ ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ নিয়ে আকাঙ্খা কি?
সাব্বির হোসাইনঃ শুধুমাত্র একটিই আকাঙ্খা; একজন পাঠক যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-পাঠের সকল কনটেন্ট মুক্তিযুদ্ধের ই-আর্কাইভেই খুঁজে পান। সত্যি বলতে আর চার-পাঁচ বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সকল বই, দলিল, পত্রিকার কাটিং, ছবি, ফুটেজ, ডকুমেন্টারি ডিজিটাইজড করে ফেলতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস।