মিয়ানমারে সামরিক সহিংসতার পর থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ফলে তীব্র অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশুগুলো। এদের সবাইকে সুস্থ করতে আগামী পুরো বছর জুড়ে চিকিৎসা দিতে হবে।
জাতিসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) একটি গবেষণায় পাওয়া ফল থেকে এমন আশঙ্কাজনক তথ্য জানিয়েছে।
মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ণের শিকার, এমন ৪৫টি গ্রামে গবেষণা চালায় সংস্থাটি। সেখানে প্রায় ৭৫ হাজার অধিবাসী নির্যাতনে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫টি গ্রামে পাঁচ বছরের কম বয়সী মোট ৮০ হাজার ৫শ’ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। অবশ্য যেখানে মানুষের আয় কল্পনাতীতভাবে কমছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যদ্রব্যের দাম, সেখানে এমনটাই হওয়ার কথা স্বাভাবিক চিত্র।
জরিপে একটি শিশুও পাওয়া যায়নি যার ন্যূনতম আবশ্যিক খাদ্যচাহিদা পূরণ হয়েছে বা হচ্ছে। মাত্র ১৪ শতাংশ নারী খাদ্যাভ্যাসে সামান্য ভিন্নতা ধরে রাখার সুযোগ পান। আর সার্বিকভাবে মানবিক সহায়তার দরকার সোয়া দু’লাখ মানুষের।
সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি হচ্ছে মংদাও। সেখানকার এক-তৃতীয়াংশ পরিবারই তীব্র খাদ্যাভাবের শিকার। এরা টানা ২৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকছে কারণ ঘরে কোনো খাবার নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অনেক পরিবারের পুরুষেরা যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘর ছেড়েছে। এর ফলে একজনমাত্র নারী পরিচালিত ওই পরিবারগুলোতে কষ্ট আরও বেশি। সবগুলো গ্রামেই অধিবাসীরা দ্রুত ওজন হারাচ্ছে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ২০১৬ সালের শেষদিক থেকে শুরু হওয়া সহিংস ঘটনার সময় থেকে খাদ্যাভাবে থাকা অঞ্চলগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা দিনদিন আরও কমছে। প্রায় অর্ধেক সংখ্যক স্থানীয় বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ফলে খাবারের দাম খুব দ্রুত বেড়ে আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের প্রোটিনের মূল উৎস শুঁটকি মাছের সরবরাহও খুব কম।
ডব্লিউএফপি আশঙ্কা করছে, অপুষ্টিতে ভোগা রোহিঙ্গাদের সময়ের সঙ্গে আরও বেশি মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে আসন্ন বর্ষাকালেও তাদের এলাকা ছাড়ার ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা খাদ্য পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল করে তুলবে অনাহারে থাকা মানুষগুলোর জন্য।