মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দেওয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বিবৃতি প্রতিরোধ করেছে চীন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক আলোচনায় বসে। কিন্তু তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়, কারণ তাতে চীন সমর্থন যোগায়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে চীনের। তাই যৌথ বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সমর্থন আবশ্যক।
এই আলোচনার আগে মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শরনার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দখলে নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানান।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতির কারণেই এই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সাম্প্রতিক ফলাফল সু চির দলে বিপুল বিজয় অর্জনকেই প্রকাশ করে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ এলিঅট প্রাসসি ফ্রিম্যান বলেন, চীন জেনারেলদের কর্মকাণ্ডের উপর জোড়ালো অনুমোদন না দিলেও স্পষ্ট সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। চীন এমনভাবে আচরণ করছে যেন এটা মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ বিষয়। ঠিক যেভাবে চীনা গণমাধ্যম উল্লেখ করছে, আমরা মন্ত্রীসভার রদবদল পর্যবেক্ষণ করছি।
যদিও এই বিশ্লেষক মনে করেন, জাতিসংঘের বিবৃতি তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন আনবে না। তারপরও সেটা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে সেটা আসন্ন না বলেই মনে হচ্ছে।
লেখক এবং দি ডিপ্লোম্যাটের সাউথ ইস্ট এশিয়া এডিটর সেবাস্টিয়ান স্ট্র্যানজিও বলেন, অন্যান্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে বেইজিং যেমন সংশয়বাদ দেখায় এই পরিস্থিতিতেও বেইজিংয়ের অবস্থান ঠিক তেমনই।
গত কয়েকদিন যাবত চীন সতর্কতা জানিয়ে বলছে, নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক চাপ শুধু দেশটিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে।
পশ্চিমের সাথে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতা থাকলে চীন কৌশলগতভাবে উপকৃত হবে কিন্তু স্ট্র্যানজিও সতর্ক করে বলেন, তাই বলে চীন এই সেনা অভ্যুত্থানে খুশি এমনটা বোঝায় না। চীনের সঙ্গে এনএলডির ভালো ব্যবস্থা ছিলো এবং সু চির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে অনেক চেষ্টাও চালিয়েছে তারা।
তিনি যোগ করেন, সেনাবাহিনীর আবার ফিরে আসার মানেই হলো চীনের আবার এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চালাতে হবে যারা ঐতিহাসিকভাবেই চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান।
সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে নির্বাচনে জালিয়াতি নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে।
তার পরপরই এনএলডির শীর্ষ নেত্রী অং সাং সু চি, দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার সদস্যসহ প্রভাবশালী রাজনীতিকদের আটক করে সেনাবাহিনী।
পরে সেনাবাহিনী এক ঘোষণায় জানায়, আগামী ১ বছরের জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতায় থাকবে তারা।