রোহিঙ্গা গণহত্যার সংবাদ প্রকাশ করায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রয়টার্সের দুই সাংবাদিকে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা গার্ডিয়ানের তথ্য মতে, মিয়ানমারে ইয়াঙ্গুনের ইনসিন কারাগারে ৫০০ দিনের বেশি জেলে কাটানোর পর মুক্তি দেয়া হয়েছে রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ওকে (২৮) ।
ইনসিন কারাগারের প্রধান জাও জাও নিশ্চিত করেছেন মঙ্গলবার সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ওকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এবং দেশটির প্রেসিডেন্টের রাজক্ষমার আদেশের কারণে মুক্তি পেলেন তারা।
মুক্তির পর কয়েক মিনিট পর ওয়া লোন বলেন, ‘আমি সত্যিই আমার পরিবার এবং সহকর্মীদের দেখতে পেরে খুশি এবং উত্তেজিত। আমি আমার নিউজরুমে ফিরে যেতে আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’
রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে অ্যাডলার বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, মিয়ানমার আমাদের সাহসী সাংবাদিকদের মুক্তি দিয়েছে।
রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের নাগরিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ইন দিন ওই গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালানোর সময় গ্রামবাসীর কাছ থেকে তিনটি ভয়ংকর ছবি সংগ্রহ করেছিলেন।
সেগুলোর দুটিতে একটি গণকবরের সামনে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। তৃতীয় ছবিতে ওই ১০ জনকেই ওই গণকবরে গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত হয়ে অসাড় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওই দুই সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদন শেষ করার আগেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার দেখায়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করে ইয়াঙ্গুনের একটি জেলা আদালত। নভেম্বরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনের হাইকোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা।
এ বছরের ১১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখা হয়। ওই সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করায় তা খারিজ করা হয়।
মিয়ানমারের কারাগারে থাকা অবস্থায় রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিক গত ১৫ এপ্রিল পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন।