‘‘বাংলাদেশের পুলিশ যদি জোর করে আমাদের ফিরে যেতে বাধ্য করে, তাহলে আমি মনে করি আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার চেয়ে আত্মহত্যা করাই ভালো।’’
এভাবেই নিজের ভয়ের কথা বৃটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলছিলেন কক্সবাজারের জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসমাইল। স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
ইসমাইল বলেন, আমি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষকে বলেছি, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার নিয়ে আমি খুব ভীত, কারণ দেশটি এখনো রোঙ্গিাদের জন্য অনিরাপদ। কিন্তু তারা বলছে আমাদের কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে।
তার মতো মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর তালিকায় থাকা অনেকেই ভীত দেশে ফেরা নিয়ে। তারা দেশে ফিরবে না বলে এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে পালিয়ে বেড়াছে। অনেকে আত্মগোপনও করেছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে। কিন্তু এখনো তা বিতর্ক ছড়াচ্ছে। প্রথম ব্যাচের চার হাজার জনকে তাদের সম্মতি ছাড়াই তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। তদের প্রায় সবাই জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ফিরতে চায় না।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে কক্সবাজারে দুটি কেন্দ্র স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে প্রতিদিন দেড়শ জনকে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হবে।
সোমবার বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেন, তারা বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত।
তবে ইউএনএইচসিআর বলছে, তালিকার সবাই ফিরতে চায় কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
মিয়ানমারও প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের সমাজল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মায়াত আয়ে।
তিনি বলেন, ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের মূলত মংদু পৌর এলাকায় থাকার বাধ্যবধকতা থাকবে। প্রথমে তাদের হ্লা ফোয়ে খাউং ক্যাম্পে নেয়া হবে। সেখানে একরাত থাকার পর তাদের মংদুতে পাঠানো হবে।
‘‘গৃহহীনদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি নেই, তাদের প্রকৃত বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজেও তারা যোগ দিতে পারবে, এজন্য তাদের পারিশ্রমিকও দেয়া হবে। সরকারের উদ্যোগ পছন্দ হলে বাড়ি নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের হ্লা ফোয়ে খাউং ক্যাম্পে থাকার অনুমতি থাকবে।’’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের এসব উদ্যোগের পরও রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে চায় না। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বার বার তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা ভয়ের কথা বলছে এবং পালিয়ে বেড়াচ্ছে। স্বয়ং রোহিঙ্গারাই এ কথা জানচ্ছে।’
সংকটকালীন গোষ্ঠীগুলোর (ক্রাইসি গ্রুপ) কন্ঠেও একই কথার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তারা ইঙ্গিত করছে, রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের ভয়ে লুকিয়ে থাকছে।
এর আগে গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ফেরার তালিকায় নাম থাকার কথা জানতে পেরে দুইজন রোঙ্গিা আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
এ অবস্থায় ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, তারা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করবে না। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা জানায়, রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হওয়ার আগে তাদেরকে রাখাইনে যাওয়ার এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দেয়া উচিত।
আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের নির্যাতনের মুখে গত বছরের আগস্ট থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ খুন, ধর্ষণসহ অমানবিক অত্যাচার করা হয় তাদের ওপর।
মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতনকে জাতিগত নিধন বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাখাইনে এখনো গণহত্যা অব্যাহত আছে। উপরন্তু গত সপ্তাহে রাখাইনের স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের ফেরতের প্রতিবাদে বিক্ষোভও করেছে।