রোববার মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক জাতীয় নির্বাচন। গত ২৫ বছরের মধ্যে বহুদলের অংশগ্রহণের এই নির্বাচন নিয়ে মিয়ানমারের জনগণ উচ্ছ্বসিত হলেও বলতে গেলে আশার কিছুই দেখছেন না সেদেশর সংখ্যালঘু মুসলিমরা।
রোববার সকালে যখন ভোট দিতে শুরু করবেন মিয়ানমারবাসী। তখন ঘরেই বসে থাকতে হবে মুসলমানদের। নির্বাচনে মুসলিম নাগরিকরা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন না। তাই এই নির্বাচন নিয়ে তীব্র হতাশায় মিয়ানমারের মুসলিমরা।
রাখাইন প্রদেশের প্রধান শহর সিটউই এলাকার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রিত গোলাপি রঙের পরিচয়পত্রের অধিকারী অল্প কয়েকজন নাগরিকের একজন সোই হ্লাইং। তবে ৪৪ বছর বয়সী এ মুসলিম নাগরিক জানালেন, তার সুযোগ আছে, তবে ভোট দেবেন না।
কামান সম্প্রদায়ের মুসলিম নাগরিক সোই হ্লাইং থাকেন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গেই। কামান সম্প্রদায়ের মতো মিয়ানমারের ১৩৫টি নৃ-গোষ্ঠী জন্মসূত্রে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার অর্জন করলেও, এই অধিকার থেকে এখনও বঞ্চিত রোহিঙ্গারা।
২০১২ সালে নৃশংস বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গায় রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যার সময়েই সোই হ্লাইং বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়শিবিরে আসতে বাধ্য হন। তবে এই শিবিরে আজও তিনি রোহিঙ্গা প্রতিবেশীদের মতোই স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পান না।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে যদি ভোটের সুযোগ না পায় তাহলে আমিও ভোট দেব না।’
অনেকের মতো সোই হ্লাইং’র স্ত্রীও এই আশ্রয়শিবিরের ক্ষুদ্র ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। রাখাইন প্রদেশের বড় শহর সিউইর আশপাশের ২০টি আশ্রয়শিবিরের এক লাখ মুসলিমের মধ্যে মাত্র ১৫০ জন ভোটের জন্য যোগ্য বলে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারের সময়ে কট্টর বৌদ্ধ পুরোহিতরা মুসলিম-বিদ্বেষকে আরো গভীর করে তুলেছেন। কট্টর বৌদ্ধদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে সু চি’র গণতন্ত্রপন্থী দল এনএলডি (ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেটিক) কোনো মুসলিম নাগরিককেই নির্বাচনে প্রার্থী করেনি। দেশটির ৫ কোটি ১০ লাখ নাগরিকের ৫ শতাংশ মুসলিম। অথচ হাতে গোনা কয়েকজনই মাত্র বিভিন্ন দল থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে আধাসামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন সাময়িক নাগরিকত্বের সাদা কার্ড বাতিল করে দেন। এর ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য ভোট দান অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ নিয়ে ব্যাপক হতাশা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিয়ানমার শাখার জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেভিড ম্যাথিসন।
রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শক্তিশালী দল ‘আরাকান ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি) এবং তার কর্মীদের দাবি, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নন। তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে গিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু সব সম্প্রাদায়ের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জাতিসংঘের আবেদন পর্যন্ত আগ্রাহ্য করেছে জান্তা সরকার।
শুধু ভোটের মতো মৌলিক অধিকারই নয়, আরো অনেক অধিকারই হারিয়েছে রোহিঙ্গারা। একটি নির্দিষ্ট গ্রামে বসবাসের পাশপাশি অতিপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে গেলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয় তাদের।
৪১ বছরের কৃষক আব্দুল সাকুর আক্ষেপ নিয়ে বলেন, নতুন আইন করার আগে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও এখন পারছি না। তাহলে আমাদের সন্তানরা এ দেশে মুক্তভাবে কেমনে বসবাস করবে?
গণতন্ত্রের নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল এনএলডি বিপুল ভোটে জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই নেত্রী তো আসলে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরই প্রতিনিধিত্ব করবেন, রোহিঙ্গাদের করবেন না। কোথাও আশার আলো দেখছে না রোহিঙ্গারা।