মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা নির্যাতনের সাথে দেশটির সামরিক বাহিনীর সংযোগ খুঁজে পেয়েছে মানবাধিকার কর্মীদের একটি দল। রাখাইন রাজ্যের ওয়া পেইক গ্রামের কিছু স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ণের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এইচআরডব্লিউ জানায়, ছবিতে দেখা যায় যখন ওয়া পেইক গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো, তখন নিকটবর্তী আর্মি পোস্টের কাছে সামরিক বাহিনীর ট্রাকগুলো সক্রিয়। এতে প্রমাণিত হয় সেই এলাকায় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ছিলো।
মানবাধিকার সংস্থাটির এশিয়াঅঞ্চল বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সত্বেও জঙ্গিরা ওয়া পেইকে এক মাসের ভেতর তিন শতাধিক বাড়ি পুড়িয়েছে।
এই ঘটনায় মিয়ানমান সরকারকে অসম্পৃক্ততার দাবি থেকেও সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তবে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের ঘটনাগুলো তদন্তাধীন বলে এই অভিযোগের বিষয়ে সরকারের মুখপাত্র জো তাই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সরকারের পাঠানো একটি দল গত কয়েকদিন আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে। তাদের তদন্তের ফল জানুয়ারির শেষ দিকেই প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া নিয়ে একাধিকবার এ ধরনের অভিযোগ করা হয়। তবে দেশটির সেনা করা কোনো অপরাধ স্বীকার করেনি সরকার। তাদের দাবি আন্তর্জাতিক সমবেদনা পাওয়ার জন্য রোহিঙ্গারা তাদের নিজের বাড়িতে নিজেরাই আগুন ধরিয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত সামরিক চৌকিতে জঙ্গি হামলায় নয়জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর থেকেই সাংবাদিকদের রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
ওই ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে কমপক্ষে সাড়ে তিনশো রোহিঙ্গা নিহত হয়। এছাড়াও বহু রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর বাড়ি-ঘর হারিয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
অবশ্য দেশটির সেনাবাহিনী বলছে, সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা তদন্তে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।