চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মিস ওয়ার্ল্ড মানুশি যেন এক চ্যাম্পিয়ন স্বর্ণ কিশোরী

বয়স মাত্র বিশ। আর এই বিশ বছর বয়সেই তার চিন্তার পরিধির বিস্তার চমকে যাওয়ার মতো। মানুষকে নিয়ে ভাবেন তিনি। অসচেতন নারীদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে চান। বিশ্বের কাছে ভারতকে তুলে ধরতে চান। তিনি মানুশি চিল্লার, এবারের মিস ওয়ার্ল্ড।

মানুশি পড়ালেখা করছেন মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় তিনি বনে গেলেন মিস ওয়ার্ল্ড। প্রতিযোগিতার ‘বিউটি উইথ এ পারপাস’ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে মানুশি চিল্লার নারীদের পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ শুরু করেন। তার এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয় প্রজেক্ট শক্তি। এই প্রকল্পে তিনি ২০টির বেশি গ্রাম ঘুরে কিশোরীদের এবং নারীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদেরকে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বোঝান। এভাবে ৫ হাজার নারীর জীবনে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা পালন করেন তিনি। ভবিষ্যতেও তার এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে যদি সুযোগ পান।

নারীদের পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার মূল উদ্দেশ্য হলো সুস্থ জীবন লাভ। নারী সুস্থ থাকলে শিক্ষাজীবন সহজ হবে। ফলে নারী স্বাবলম্বী হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন শুরু হবে। এতে কমবে বাল্যবিবাহ, মাতৃমৃত্যুর হার এবং আরও অনেক সমস্যা।

মানুশির আগ্রহের এই বিষয়টি নিয়ে কাজ হচ্ছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই। বাংলাদেশের কিশোরীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে স্বর্ণ কিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন। অনেকে তাই বলছেন, মানুশি যেন আরেক স্বর্ণ কিশোরী। তার কাজের ক্ষেত্র এবং মিস ওয়ার্ল্ড হওয়া বাংলাদেশের স্বর্ণ কিশোরীদের জন্যও এক আনন্দের বারতা।

পিরিয়ড কোনো লজ্জার বিষয় নয়, চুরি করা কিংবা মিথ্যা বলা হলো লজ্জার বিষয়।

স্বর্ণ কিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন প্রধান ফারজানা ব্রাউনিয়া বলেন, মিস ওয়ার্ল্ড মানুশি চিল্লারকে স্বাগত জানায় স্বর্ণ কিশোরী। নারীদের পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করার উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। কারণ দেশের জন্য কাজ না করলে মিস ওয়ার্ল্ড অচল মুদ্রার মতো। জনপ্রিয়তাকে মানুষের সেবার জন্য ব্যবহার করলেই তার এই অর্জন সার্থক হবে।

প্রজনন স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: প্রথম যখন ২০১৩ সালে স্বর্ণ কিশোরী ৫০০ জন কিশোরী, তাদের বাবা-মা, ডিসি, সিভিল সার্জন এবং এসপি হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন উঁচু করে ধরেছিলেন তখন ভাবাও যায়নি মানুষ এত সহজে বিষয়টিকে গ্রহণ করবেন। উদ্দেশ্য ছিল দুই কোটি কিশোরীর হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরই পরিবারের মেয়ে এই দুই কোটি কিশোরী।

‘তাই মানুষ বুঝতে পেরেছে এটা লজ্জার বিষয় নয়, চুরি করা কিংবা মিথ্যা বলা হলো লজ্জার বিষয়।’

চ্যানেল আই অনলাইনকে ফারজানা ব্রাউনিয়া বলেন, তার এখনও মনে পড়ে তৎকালীন গাইবান্ধার ডিসি উপস্থিত হাজারো মানুষের সামনে নিঃসংকোচে বলেছিলেন, ‘প্রথম যখন আমার মেয়ের পিরিয়ড হয়েছিল, আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল। আমার মেয়ে বড় হয়েছে। তার পিরিয়ডের কাপড় আমি নিজ হাতে ধুয়ে দিয়েছি।’

স্বর্ণ কিশোরীর উদ্দেশ্য ছিল দুই কোটি কিশোরীর হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।