আনিসুর রহমান মিলন। ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ। পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও নিজের স্বকিয়তার সাক্ষর রেখেছেন। সামনে মুক্তির অপেক্ষায় আছে একাধিক চলচ্চিত্র। ৩ জুন এই অভিনেতার জন্মদিন। তাকে নিয়ে স্মৃতিকাতর নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। তার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা, তার ব্যক্তি জীবন-সবই উঠে এসেছে এই নির্মাতার লেখায়। মিলনের জন্মদিনে চয়নিকা চৌধুরীর লেখাটি থাকলো পাঠকের জন্য:
২০১৫ সালে আমার টেলিফিল্ম ‘অনুমতি প্রার্থনা’য় স্ক্রিপ্ট না পড়ে মাত্র একটি সিনে অভিনয় করতে রাজী হয়েছিলেন। তিনি আনিসুর রহমান মিলন। সবার কাছে একজন শক্তিমান অভিনয় শিল্পী। আমার কাছে তিনিই সেই অভিনয় শিল্পী, যিনি আমাকে কোন স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন।
আমার ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে সত্যি আমি অনুভব করেছি। সাধারণত আমি আমার পছন্দের কারো জন্মদিনে তার ছবি দিয়ে প্রোফাইল বা কভার করে কিছু লিখি। এটা আমার নিজের জন্য লিখি। আমার ভালো লাগার জন্য লিখি। কিন্ত দেখা গেল যার জন্মদিন তারই ভালো লাগছে বেশী। এটাই স্বাভাবিক।
আনিসুর রহমান মিলনের ‘অতঃপর’ নামের নাটকটি দেখে প্রথম মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি। তখন থেকে আমি ওর ফ্যান। কিন্ত ঝামেলা বাঁধলো ওর সাথে ওর লম্বা চুল নিয়ে। আমার ছেলেদের লম্বা চুল সারা জনমের অপছন্দের। একদম ভালো লাগেনা। আমি জানি এটা আমার লিমিটেশনস। ওর সাথে আমার যখনই দেখা হতো, মিলন বিনয়ের সাথে বলতো, ‘কাটবো কাটবো।’ ফিল্মের বা নাটকের কনটিনিটির কথাই ও বার বার বলতো। ২০০৪ সাল থেকে মিলন আমাদের মানে অনন্যসৃষ্টি অডিও ভিশনের কাজ করে। যা আমার স্বামী অরুণ চৌধুরী ডিরেকশন দিতো আর আমি সবসময় সেট এ থাকতাম। কিন্ত আমার সাথে কাজ করা হয়নি।
২০০৬ এর জানুয়ারি। মিলন চুল কাটলো। ওর সাথে প্রথম কাজ করলাম ২০০৬ জুন মাসের ১৭ আর ১৮ তারিখ জাকারিয়া সৌখিনের লেখা ‘পড়শি’ নাটকে। ওর কো আর্টিস্ট ছিল আরেক শক্তিশালী অভিনয় শিল্পী তারিন। কাজ করলাম, মুগ্ধ হলাম। মিলন ভালো অভিনয় করে সবাই জানে। মিলনের যেদিকটা আমাকে সেদিন থেকে আজ অবধি মুগ্ধ করে তা হচ্ছে ওর বিনয় আর সুন্দর ব্যবহার। সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত মিলনের সাথে ওর পরিবারের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। একদিনের জন্য মনমালিন্য হয়নি।
কিন্ত কথা হলো, মিলনের সাথে আমার প্রথম কাজ করার অনুভূতি হৃদয়বিদারক। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে ‘একাকী একজন’ নাটকে বিপাশা হায়াত এর সাথে মিলনকে কাস্টিং করেছিলাম প্রথম। সাথে আরও ছিল তারিক আনাম খান। শুটিং ছিল মার্চ ৪ আর ৫ তারিখ। শুটিং এর দিন ভোর সাড়ে ৫টায় মেসেজ এলো ‘My Father is no more…! রাতে মারা গিয়েছে দিদি। আপনি কাউকে নিয়ে কাজটা করে ফেলেন।’
সুব্রতকে ফোন করলাম ভোর ৬ টায়। বললাম,‘সুব্রত শুটিং প্যাক আপ করে দাও।’ আমি আর্টিস্টদের জানিয়ে দিলাম। সাড়ে ৭টায় ছুটে গেলাম ওদের কলোনীর বাসায়। মিলন এলো, কথা হলো। যাবার সময় ও আবারও রিপিট করলো, শুটিংয়ে যাচ্ছেন না? আমার মুখে যখন না শুনলো, মুখে কিছুই বললো না। জড়িয়ে ধরলো। সেইদিন আমি মিলনের চোখে যে জল দেখেছিলাম তা হলো খারাপ সময়ে মানুষ সম্মানিত হলে যেমন অনুভব হয় ঠিক সেদিন মিলনের ও তেমন ই হয়েছিল।
এরপর থেকে মিলন ও ব্যস্ত, আমিও। গত ৩-৪ বছর যাবত প্রতি মাসে আমি মিলনের ডেইট চাই। বেশির ভাগ সময়েই ও দিতে পারেনা। কিন্ত মজা করে সবসময় বলে,‘দিদি, আমি তোমার সিরিয়াল এ তিন নম্বর। এক নম্বর মাহফুজ আহমেদ, দুইয়ে অপূর্ব আর তিনে আমি।’ এ কথার আমি কোন উত্তর দেই না। শুধু হাসি।
কিন্ত আমি আজ আনিসুর রহমান মিলনকে বলতে চাই, মিলন আমি মেধাবী নই। আমি পরিশ্রমী। ১, ২, ৩ নম্বর আমি বুঝিনা। আমি স্বার্থপর না, অকৃতজ্ঞ ও না। আমি শুধু বলতে চাই আনিসুর রহমান মিলন অভিনয় শিল্পী আর মানুষ হিসেবে আমার কাছে স্পেশাল। যে আমাকে সম্মান করে, ভালোবাসে। ঠিক সময়ে সেট এ আসে স্ক্রিপ্ট পড়ে। দাঁড়িয়ে থাকলে চেয়ার এগিয়ে দেয়, শত ব্যস্ততার ভিতর ফোন করলে ফোন ধরে, ধরতে না পারলে কল ব্যাক করে যত রাত হোক। পরিবারের খারাপ সময়ে ফোন করে সবার কুশলাদি জানতে চায়, সেই ই স্পেশাল। প্রকৃত অর্থে শিল্পী। এটুকুই তো চাওয়া। আর স্পেশাল তো সবাই হতে পারেনা।
একবার পূবাইলে শুটিং আমাদের। শুটিং শেষে জোৎস্নারাতের বেলায় বারী সিদ্দিকীর ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গান টা মিলনের কণ্ঠে শুনে চোখ ভেসে জল পড়েছিল। এত্ত দারুণ গান গায় মিলন!
আজ ৩ জুন। এই প্রিয় মানুষটার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মিলন। ঈশ্বর তোমার ভালো করুক। সদা থাকো আনন্দে। জীবনে অনেক কিছুই মনের মত হয়না। তারপরও এই এক জীবনে অনেক মানুষ তোমাকে ভালবাসে। এই এক জীবনে তুমি দারুণ সুইট একটা সন্তানের বাবা হয়েছো। আর কী চাই বলো! শুধু বলবো, সদা থাকো আনন্দে। শুভ জন্মদিন তোমাকে।পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থেকো। আর এই দিদিকে ভালবেসো। বদলে যেও না। দিদি তোমাকে ভালোবাসে, সম্মান করে। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। ভালো থেকো।
লেখক: চয়নিকা চৌধুরী, নির্মাতা