দুর্দান্ত এক ব্যাটিং লাইনআপ। নিজেদের দিনে যেকোনো বোলিং আক্রমণকেই উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। টেস্ট আঙিনায় নতুন-অনভিজ্ঞের মিশেলে গড়া বোলিং শক্তি নিয়ে তাই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি পড়ার শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের। হয়েছেও সেটিই। দিন শেষে সুবিধাজনক অবস্থানে ভারত। স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেটে ৩৫৬ রান। সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে অপরাজিত বিরাট কোহলি বড় সংগ্রহের বার্তাই দিচ্ছেন।
তাই বলে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের সামনে তাসকিন-মেহেদীরা একেবারেই যে নির্বিষ ছিলেন সেটিও নয়। সুযোগ বা প্রায় সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়তো মুশফিকদের দিনটি অন্যরকমও হতে পারত। সেটি হয়নি মিরাজের ‘ক্ষমার অযোগ্য’ একটি ভুল আর স্লিপে দাঁড়ানো সাকিবের অর্ধেক সুযোগকে পূর্ণতায় রূপ দিতে না পারায়।
দিনের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মুরালি বিজয় যেমন ফিরে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ৩৫ রানেই। কিন্তু মেহেদীর ব্যর্থতায় অবিশ্বাস্যভাবে সহজ রান আউট থেকে বেঁচে যান তিনি। স্কয়ার লেগে বল ঠেলে দিয়ে পূজারার সঙ্গে একই প্রান্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজয়। বল হাতে পাওয়া কামরুল ইসলাম রাব্বির ছুঁড়ে দেওয়া বল হাতেই জমাতে পারলেন না মিরাজ। বিজয় পরে শতক তুলে ১০৮ রানে ফিরেছেন।
তার আগে পূজারার সঙ্গে ১৭৮ রান যোগ করেছেন বিজয়। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো পূজারাকে (৮৩) ফিরিয়ে অবশ্য শাপমোচন করেছেন সেই মিরাজই। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দিন শেষে তাই আফসোসটা থেকেই যাচ্ছে; ইশ! মিরাজ যদি একটু আগেই পারতেন!
সুযোগ হাতছাড়া করেছেন অভিজ্ঞ সাকিবও। প্রায় সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে অনেক সময় ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। এমনই দুটো সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিব। মিরাজের ওভারে স্লিপে দাঁড়ানো সাকিবের দিকে দুবার বল চলে গিয়েছিল। কাছাকাছি জায়গায় বল পড়েছিল। কিন্তু নাগাল পাননি। যতক্ষণে বুঝলেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুই সুযোগের একটি আবার বিজয়ের ব্যাট ছুঁয়ে এসেছিল। সাকিব এদিন বোলিংয়েও ১৩ ওভারে ৪৫ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থেকেছেন। দিন শেষে তাই বিশ্বসেরা তারকার প্রাপ্তির খাতটা দলীয় কোরাসের মতই বিবর্ণ!
বল হাতে বিবর্ণ থাকলেন নিউজিল্যান্ডের পিচে স্বপ্ন দেখানো রাব্বিও। ১৭ ওভারে খরচ করা ৯১ রানের পিঠে উইকেট নেই। তাইজুল ইসলাম একটি উইকেট নিয়েছে, রানও আটকেছেন। কিন্তু মিরাজের ২০ ওভারে ৯৩ রান তুলে নিয়েছেন ভারতীয়রা।
হতাশার দিনটিতে অধিনায়কত্বের কোটাতেও বিবর্ণ থাকলেন মুশফিক। তাইজুলের বলে অযথা রিভিউ নিলেন। গ্লাভস হাতে দৃষ্টিকটু প্রদর্শনী। বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং পরিকল্পনায়ও কোনো ছাপ থাকল না। গুরুত্বপূর্ণ টসটাও হেরে বসেছেন। সব মিলিয়ে অধিনায়কের ঝিমিয়ে থাকার দিনে উদ্দীপ্ত থাকলেন কেবল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। টেস্টের বাকি দিনগুলিতে যে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সেটিরই প্রতীকী চিত্র যেনো দিনজুড়ে ধরা দিলো।