‘মিটু’ প্রকাশকারীদের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন মিটু আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশকারীরা। একই সাথে যৌন নিপীড়কের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মিটু মুভমেন্ট বাংলাদেশ’র সাথে সংহতি প্রকাশ করে আয়োজিত মানববন্ধনে এই আহ্বান জানানো হয়।
এসময় সরকারের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু। তিনি বলেন, এই আইন বাস্তবায়িত হলে যৌন হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে।
মিটু আমলে নেয়ায় ডেইলি স্টারের প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি মমতাজ বিলকিস বানু বলেন, আমরা আশা করি ডেইলি স্টার অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
উইমেন জার্নালিস্ট নিউজ নেটওয়ার্কের সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি বলেন, সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে মিটু’তে নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা প্রকাশকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন শতাধিক সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা।
‘দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিন্টু মুভমেন্ট বাংলাদেশ এর সাথে সংহতি মাননবন্ধনে তারা বলেন, হাজার বছরের ট্যাবু ভেঙে বের হয়ে আসা এই সব সাহসী মেয়েদের প্রতি সমবেদনা, শ্রদ্ধা এবং পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শারমিন রিনভী বলেন, এমন অনৈতিক আচরণের বহিঃপ্রকাশে দেশের স্বনামখ্যাতদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। অভিযুক্তদের আসল চেহারা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আমরা বিব্রতবোধ করছি। বিষয়টি এখন কমিউনিটির গন্ডি পেরিয়ে পারিবারিক অঙ্গনেও প্রবেশ করায় যারপরনাই বিব্রত, চিন্তিত আমরা।
মানবন্ধনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা সোমা বলেন, যৌন নিপীড়ন বন্ধে পরিবার থেকে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য সকলকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মী রোকসানা ইয়াছমিন তিথি বলেন, অভিযুক্তদের এমন ঘৃণ্য আচরণে আমরা বিস্মিত। সেই সাথে তাদের এ ঘৃণ্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, কারণ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর সদস্য হিসেবে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা এবং অভিযুক্তরাও আমন্ত্রিত থাকি। সেসব অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ সময় আমি বা আমাদের পরিবারের সদস্য অংশ নেন। এতে শঙ্কিত বোধ করছি।
সাংবাদিক উদিসা ইসলাম বলেন, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন, এই আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে। যদিও শিশু ও নারী যৌন নিপীড়ন নতুন কোন সমস্যা নয়। যুগের পর যুগ এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই বেড়ে ওঠেন নারী ও শিশুরা। কিন্তু একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আমরা জেনে শুনে আমাদের সন্তানদের যৌন নিপীড়নকারীর সংসর্গে রাখতে পারি না। নিপীড়ন একটি রোগ। বিকারগ্রস্ত মানসিকতার প্রকাশ। এটি এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য সকল অভিযুক্তের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন তিনি।
পরে অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া, সকল গণমাধ্যমে বয়কট এবং সামাজিক সংগঠনগুলো থেকে তার সদস্য পদ বাতিলের দাবিও জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে মুশফিকা লাইজু, নাদিরা দিল রুবা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভ, প্রজন্ম একাত্তর এর আহ্বায়ক এফ এম শাহিনসহ শতাধিক নানা পেশাজীবী মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।