ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন(শুক্রবার) একই মঞ্চে বসেছিলেন বলিউডের প্রখ্যাত দুই অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা ও নন্দিতা দাস। সেশনের শিরোনাম ছিল ‘ব্রেকিং ব্যাড’। সেশনে কথা হয়েছে মিডিয়ায় নারীদের অবস্থান নিয়ে, মেল গেইজ বা পুরুষের চোখে নারীকে দেখার বৃত্তান্ত নিয়ে। নন্দিতা দাস বলেছেন তার কাজ করার অভিজ্ঞতা, সময়ের সাথে সাথে কাজের ক্ষেত্র বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে, সোস্যাল অ্যাক্টিভিটি আর শিল্পী এবং পরিচালকের জীবন নিয়েও।
মনীষা কৈরালা বলছিলেন তার ক্যান্সার আক্রান্ত সময়কালের জীবন নিয়ে, যে বই প্রকাশ হয়েছে তাতে ক্যান্সারের সাথে সাথে মেল-গেজ নিয়েও একটা অধ্যায় আছে তাই কথায় কথায় আলোচনায় উঠে এল মেল-গেজ প্রসঙ্গও। কথা হল সোশ্যাল মিডিয়া এবং হ্যাশ ট্যাগে চলমান মিটু মুভমেন্ট নিয়েও।
ঢাকা লিট ফেস্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সেশন ছিলো ‘ব্রেকিং ব্যাড’। সবার দৃষ্টি ছিলো এই সেশনটির দিকে। বিশেষ করে নারীদের। কারণ এই সেশনে অতিথি ছিলেন বলিউডের দুই দাপুটে অভিনেত্রী মনীষা ও নন্দিতা। যারা অভিনয় জীবনে যেমন স্বপ্রতিভু, তেমনি বিভিন্ন সময়ে বলিউডে নারীদের অধিকার সোচ্চারে কথা বলেছেন। তাদের আসরটি দেখতে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ।
শুরুতেই নন্দিতা বলছিলেন যখন তিনি কাজ শুরু করেছিলেন তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের দেখা যেত স্টেরিওটাইপ চরিত্রে অভিনয় করতে। এখন অবস্থা অনেক বদলেছে।
তাঁর বেড়ে ওঠার গল্প বলতে গিয়ে নন্দিতা বলেন, শৈশবে গায়ের রঙ বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি পরিবারের কাছ থেকে। বলছিলেন – বাবা কখনোই বলেননি আমায় দেখতে কেমন লাগছে, কথাবার্তা সবসময় কতটা সুন্দর এই পোষাক বা অন্য কোন কিছু নিয়ে। তো গায়ের রঙের যে ক্যাম্পাইন ভাইরাল হল তা হঠাৎ করেই আমার কাছে এসেছিল। যারা করতে চেয়েছিলেন আমায় বললেন এরকম গায়ের রঙ নিয়ে আমরা একটা ক্যাম্পেইন করতে চাইছি। তো হয় না অনেকসময় মনে হয় আচ্ছা ব্যাপারটার সাথে একাত্ম বোধ করছি কাজটা করা যায়। সেরকম ভেবেই কাজটা করা, কিন্তু তারপর আমিই ক্যাম্পেইনের আইডেনটিটি হয়ে উঠেছিলাম উদ্ধৃতি আর ছবি ভাইরাল হওয়ার কারণে। আসলে এই ক্যাম্পেইনে যুক্ত হওয়ার পরেও বিস্তারিত জানতে পেরেছিলাম কীভাবে রঙ ফর্সাকারি প্রোডাক্ট কী করে ক্ষতি করছে শুধু তরুণদের না প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের। এছাড়া অনেক মেইল আর মেসেজ পেয়েছিলাম যে মানুষ কী করে এইসব বৈশিষ্ট্যের জন্য দিন দিন অবদমনের শিকার হচ্ছে পরিবারে, সমাজে।
একজন সাংবাদিক বলছিলেন বাংলাদেশেও এরকম একটা ক্যাম্পাইন হয়েছে যে সুন্দর মানেই ফর্সা নয়। তো এসব ইতিবাচক আমিও বলছি, সুন্দর মানেই ফর্সা নয়। এমনকি ফর্সা যারা তারাও আসলে এসব কাজে অংশ নিতে পারেন এই ভিত্তিতে যে ফর্সা হোক বা কালো কোনটাই স্পেসিফিকভাবে সৌন্দর্য বোঝায় না, এসব আপেক্ষিক ব্যাপার। এসব প্রসঙ্গে বয়স নিয়ে সমাজে প্রচলিত ধারণার কথাও উঠে আসে। মনীষা কৈরালা বলেন চল্লিশ পেরোলেই দেখা যাচ্ছে নারীদের মায়ের চরিত্র অভিনয় করতে দেওয়া হচ্ছে। অথচ একই বয়সের পুরুষেরা বিশ বছর বয়সী অভিনেত্রীর সাথে অভিনয় করছেন।
হ্যাশ ট্যাগে ‘মিটু আন্দোলন’ নিয়ে দর্শকের প্রশ্নের জবাবে মনীষা কৈরালা বলেন– সোস্যাল মিডিয়ার কথাবার্তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া বা পুওর কারড ব্যবহার করে বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করাকে আমি সাপোর্ট করি না। এটা ইতিবাচক যে নারীরা কথা বলছেন, এখন সে ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তবে আইনের মাধ্যমেই যথাযথ উপায়ে শাস্তি প্রদানের ব্যাপারেই আমি আগ্রহী। এক্ষেত্রে নারীদের বোল্ড এবং আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এ নিয়ে নন্দিতা দাস কোনো কথা বলেননি, চুপই ছিলেন।
এছাড়াও এলজিবিটি ইস্যু প্রসঙ্গে উঠে এসেছিল ‘ফায়ার’ চলচ্চিত্রের কথাও। বলিউডের আইটেম সং নিয়ে মনীষা কৈরালা বলছিলেন নান্দ্নিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কি না সেটা হল বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রে নন্দিতা দাস বলেন – শেষ পর্যন্ত এসব ক্ষেত্রে নারীকে একটা আকাঙ্খিত বস্তু বা অবজেক্ট হিসেবেই দেখানো হয়। কথা হয়েছে ক্যামেরার পেছনে লাইট বা সাউন্ড ডিজাইন এসমস্তে ক্ষেত্রে কতটা অংশগ্রহণ করছেন নারীরা এ প্রসঙ্গ নিয়েও।
এরআগে ঢাকা লিট ফেস্টের শুরুর দিন নিজের নির্মিত দ্বিতীয় সিনেমা নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির ছিলেন নন্দিতা দাস। উর্দু ভাষার প্রভাবশালী লেখক সাদত হাসান মান্টোকে নিয়ে নির্মিত ছবিটি দেখতে বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ছিলো উপচে পড়া ভিড়। সেখানে নন্দিতা মান্টোর জীবন ও সাহিত্য জীবন ছাড়াও কথা বলেন মান্টো সিনেমা নিয়ে।