দেখতে ততটা সুঠাম নয় কিন্তু শক্তিশালী। সঙ্গে স্থির দৃষ্টি। এভাবই ১৯ বছর বয়সী রাজিয়া বানু তার প্রতিপক্ষের মুখে ঘুষি মারছেন। তবে সেই প্রতিপক্ষ আর কেউ নন রাজিয়ার মা। বিধবা এই মা মেয়ের সঙ্গে বক্সিংয়ে যোগ দিয়ে ভাঙছেন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ট্যাবু।
করাচির সুলট্রি পোর্ট সিটিতে মা মেয়ে গড়ে তুলেছেন বক্সিং দ্বৈরথ। করাচির লিয়ারির পাক শাহীন বক্সিং ক্লাবে মা মেয়েকে অ্যাথলেটের পোশাক পরে লড়তে দেখা যায়। সেখানেই মাকে হারানও তিনি। গত বছরই মোহাম্মদ আলীর সম্মানজনক শেষযাত্রার দৃশ্য দেখে বক্সিং রিঙে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাজিয়া।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বক্সিংয়ে যোগ দিতে মায়ের অনুমতি নিতে যায় রাজিয়া। মেয়ের এমন চাওয়ায় খুব দ্বিধায় পড়ে যান ৩৫ বছর বয়সী মা হালিমা আব্দুল আজিজ। একেতো অর্থনৈতিক দুরাবস্থা আর তার উপরে স্বামী মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। সন্তানদের স্কুলের ফি দিতেই বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো তাকে। আর পাকিস্তানের রক্ষণশীল ও মুসলিম সমাজ তো ছিলোই নানান কটূকথা শোনানোর জন্য।
তাছাড়া নারীদের তাদের অধিকার নিয়ে লড়াইটাও এখানে কম ছিলোনা। অনার কিলিং বা অ্যাসিড আক্রমণতো পাকিস্তানে একেবারেই সাধারণ ঘটনা। এসবই নতুন করে ভাবায় হালিমাকে। তিনি বলেন, আমি মনে করি মেয়েরা একা ঘরের বাইরে গেলেই সব পুরুষরা জানোয়ার হয়ে উঠে। কিন্তু আমি রাজিয়াকে হতাশ করতে চাইনি। ও জীবনে সফল হোক সেটাই আমি চাই। এমনকি রাজিয়ার বাবাও মেয়েদের খেলাধূলাকে উৎসাহিত করতো।
হালিমা আরো যোগ করেন, পুরুষের শক্তি আছে তাই তারা নারীকে অবদমন করতে পারে, তাদের গৃহবন্দী করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি শক্তি থাকলে সেটা দিয়ে কাউকে না মেরে বরং অন্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারা উচিত। এভাবে ভাবতে ভাবতে মেয়ের আগ্রহটাই একসময় ছড়িয়ে পড়ে মায়ের মধ্যেও।
সকালে কলেজে যাওয়ার আগে একটা স্কুলে রিসেপশনে কাজ করে রাজিয়া। আর সন্ধ্যায় যায় বক্সিং ক্লাবে। সেখানে সে আরো ২০ জন নারী আছে। তবে ক্লাবটির কোচ ইউনুস কানবারানি বলেন, আমাদের মেয়েদের জন্য কাপড় বদলানোরও ঘর নেই। পাশাপাশি সামাজিক চাপ তো আছেই। অনেকে হুমকি দিয়েছে ক্লাবে আক্রমণ চালাবে বলে। এটা বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলেছে তারা। এতকিছুর মধ্যেও এটা চালিয়ে যাচ্ছি।
রাজিয়া ও হালিমা নিজেদের এখন বক্সিং দুনিয়ায় এক অন্য উচ্চতায় দেখতে চাইছে। যেখানে হালিমা চান তিনি নিজেই হয়তো একদিন মেয়েদের কোচ হিসেবে কাজ করতে পারবে। আর রাজিয়ার স্বপ্ন, আমি চাই অলিম্পিকে বক্সিং করতে। তবে শুধু অংশ নিতেই নয় সোনা জিততে। আমি জানি কোনো কঠোর পরিশ্রমই বৃথা যায় না।