মনিপুরের ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিত ইরম শর্মিলা আন্তর্জাতিক মা দিবসে রোববার জন্ম দিয়েছেন যমজ মেয়ে শিশুর।
বিগত ৬০ বছর ধরে চলে আসা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (এএফএসপিএ) এর বিরুদ্ধে ১৬ বছর যাবৎ অনশন ধর্মঘট করা শর্মিলা মা দিবসেই পেলেন মাতৃত্বের স্বাদ। নিক্স সখী ও অটাম তারা নামে দুই মেয়ের জন্মের পরে তিনি বলেন, এটা তার নতুন জীবনের শুরু।
ঘটনার শুরু ২০০০ সালের ২রা নভেম্বর। মনিপুর ইম্ফলের মালোম বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করে আধা সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলসের সদস্যরা। ঘটনার প্রতিবাদে ৫ নভেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শর্মিলার অনশন শুরু হয়।
আদর্শিক গুরু থেকে পরিবারের লোকজন, সবাই বিরোধিতা করলেও সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন ‘মনিপুরের লৌহমানবী’। অনশন শুরুর চতুর্থ দিন আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন শর্মিলা। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সরকারের নির্দেশে তাকে নাকে নল দিয়ে তরল খাদ্য দেয়া হয়।
শর্মিলার অনশনকে ঘিরে শুরু হয় মানবাধিকার আন্দোলন। অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবতর্ন হয়নি।
প্রতি বছর অগাস্টে জামিন পেয়ে পর মুহূর্তেই আবার গ্রেপ্তার হতেন শর্মিলা। এভাবেই চলে ১৬ বছর। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে অনশন ভাঙার ঘোষণা দেন শর্মিলা। পরে অনশন ভাঙার কারণ হিসেবে বলেন, তার অনশন সরকারের উপর তেমন কোনো প্রভাব আনছে না এবং এএফএসপিএ সরানোতে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
২০১৬ সালের ৯ আগস্ট অনশন ভাঙার পর সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। তাই বামপন্থি রাজনৈতিক সংগঠন ‘জনতা দল (ইউনাইটেড)-এ যোগ দিচ্ছেন।
কিন্তু পরের বছর নির্বাচনে তার দল পিআরজেএকে (পিপলস রিসার্জেন্স অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স) পায় মাত্র ৯০টি ভোট, যেখানে ‘না ভোটই’ (নান অব দ্য এ্যাবাভ-এনওটিএ) পড়ে ১৪৩টি।
বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পুরস্কার পাওয়া শর্মিলা ভারতীয় বংশদ্ভূত ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী ডেসমন্ড কুটিনহোর সঙ্গে প্রেমের খবরও তখন পাওয়া যায়।
সেই সময়ে গোয়ায় বসবাসকারী কুটিনহোর সঙ্গে চিঠি আদান প্রদান হচ্ছিলো তার। নির্বাচনের ফলাফলের পর বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত শর্মিলা মনিপুর ছেড়ে যান। কোদায়কানালে কিছুদিন কাটানোর পরে তিনি গত বছর ব্যাঙ্গালোরে চলে যান। সেখানেই এখন বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শর্মিলা ও কুটিনহো দম্পতি।
আর শর্মিলা মনিপুর ছেড়ে যাওয়ার পরে অনিবার্যভাবেই অকার্যকর হয়ে পড়ে এএফএসপিএ আন্দোলন।