মুক্তিযোদ্ধা, আবৃত্তিশিল্পী ও স্থপতি কাজী আরিফকে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকালে উত্তরায় চার নম্বর সেক্টরে তার মায়ের কবরে সমাহিত করা হবে। এর আগে সকাল পৌনে ৯টায় তার মরদেহ বহনকারী বিমানটি রাজধানীর হয়রত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। এখানে কাজী আরিফের মরদেহ গ্রহণ করবেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু শমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ বি এম হারুণসহ আরও কয়েকজন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস আজ সোমবার দুপুরে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, বিমানবন্দর থেকে কাজী আরিফের মরদেহ সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মরদেহ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাখা হবে। এখানে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। সেখান থেকে কাজী আরিফের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ধানমন্ডিতে তার মেয়ে অনুসূয়ার বাসায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এএফএম আহকামউল্লাহ আজ সোমবার চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বাদ মাগরিব তার প্রথম জানাজা হয়। কাজী আরিফের মরদেহ নিয়ে তাঁর ছোট মেয়ে নিউইয়র্কে জেএফকে বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দিয়েছেন।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মাউন্ট সেইন্ট লুকস হাসপাতালে কাজী আরিফকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গত মঙ্গলবার এই হাসপাতালে দ্বিতীয় বারের মতো তার হৃদপিন্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। কাজী আরিফের হার্টের বাল্ব অকেজো হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার বাল্ব পুনঃস্থাপন এবং ধমনীতে বাইপাস অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাজী আরিফ।
কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ী সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এসব কিছুরই হাতেখড়ি হয় সেখানে। আবৃত্তির পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি, সক্রিয় ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে।
১৯৭১ সালে ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কাজী আরিফ। এরপর যুদ্ধ শেষে বুয়েটে লেখাপড়া শুরু করেন আর সাথে সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকে তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি।
বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্পের অন্যতম রূপকার কাজী আরিফ। তিনি মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।