‘প্রতিটি জন্ম হোক পরিকল্পিত, প্রতিটি প্রসব হোক নিরাপদ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পালিত হলো ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’। গর্ভধারণের সময় একটি মাও মৃত্যুবরণ করবে না, এমন বিষয়কে সামনে রেখে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় ‘মায়ের কথা’ শীর্ষক মেলা।
‘মায়ের কথা’ মেলা যৌথভাবে আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, চ্যানেল আই ও স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন। নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘সুস্থ মা সুস্থ শিশু বলিষ্ঠ বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে স্বর্ণ-কিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী প্রধান ফারজানা ব্রাউনিয়ার সঞ্চালনায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ থেকে আকাশে নীল বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ সময় প্রত্যেকের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয় একজন কিশোরীকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেওয়া হবে না।
গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারে বিশিষ্টজনদের নিয়ে উন্মোচন করা হয় ফারজানা ব্রাউনিয়া ও রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘কিশোরী সুস্বাস্থ্য বার্তা’র মোড়ক।
নিরাপদ মা এবং নিরাপদ শিশুর জীবন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন তথ্য থাকবে গ্রন্থটিতে। অনুষ্ঠানে এই গ্রন্থটিকে জাতীয় পাঠ্য কারিকুলামে যুক্ত করার আহবান জানান ব্রাউনিয়া।
মঞ্চে দেশের সাতটি বিভাগের সাতটি বিষয়ে পারফর্মেন্স অনুসারে বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা ক্ষুদে বন্ধুরা নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলে। এছাড়াও পটের গান, লোকগীতি ও গম্ভীরা পরিবেশন করা হয়। মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন আমন্ত্রিত অথিতিরা।
অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে কণা রেজা এবং জনপ্রিয় সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনকে সম্মান তুলে দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী।
‘মায়ের কথা’ মেলার অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিলো স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ইউএনএফপিএ, পিপিডি, ওয়াটারএইড, নেসলে, ইনসেপ্টা, পানসুপারি, ওয়াশআউট, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও ওয়েলফুড।
বর্তমান সরকার প্রত্যেক মায়ের গর্ভধারণ নিশ্চিত করেছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুরহার ৫৭৪ জন থেকে কমিয়ে ১৭০ জনে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য তা ১৪০ জনে নিয়ে আসা। সেই লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষ্যে মাকে নিয়ে এই ধরণের আয়োজন করায় চ্যানেল আই ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সভ্যতার চাকা সামনে নিতে নারীরা অগ্রদূত। এই সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে নারীরা। তাই প্রত্যক নারীকে পরিকল্পিত গর্ভধারণের সবধরণের সুযোগ করে দিতে হবে।
একটি নারীরও যেনো প্রসবকালীন সময়ে মৃত্যু না হয়। বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। এতে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার কমে এসেছে।
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, মায়ের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। লাল সূর্য এনেছি। তাই আমাদের সবার উচিত মাকে নিরাপদ রাখার জন্য সবকিছু করা। যেনো মা সবসময় ভালো থাকে। আনন্দে থাকে। কারণ একটি সুস্থ মা দিতে পারে একটি সুস্থ পরিবার।
স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সুস্থ মায়ের কোলে হাসবে সুস্থ শিশু। সেই সুস্থ শিশুই গড়বে আলোকিত বাংলাদেশ। সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সূচিত হওয়ায় শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে।
ভবিষ্যতে মাতৃ মৃত্যুহারে জিরো টলারেন্স করা হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলী মা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, আমার মায়ের পরপর সন্তান মারা যায়। পরে আমার মা মহসিনের মাজারে গিয়ে প্রার্থনা করেন তার সন্তান বেঁচে থাকলে নাম রাখবেন মহসিন।
এরপর মাকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী ‘এমন একটা মা দেনা’ গানটি গেয়ে শোনান।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, একজন সুস্থ মা পারেন একটি সুস্থ শিশু উপহার দিতে। শিশু ও নারী নিরাপত্তায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সচেতনামূলক কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, আমরা শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে পারি। এবং সহনীয় পর্যায় আনতে পারলে দেশের জনসংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই।