চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মাশরাফী-মোস্তাফিজদের দাপটে এলোমেলো উইন্ডিজ

বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৯৬

ওপেনিং জুটিতে ২৯, দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৬। সতর্ক শুরুর পর হঠাৎ এলোমেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রানের চাকা ঘোরাতে গিয়ে তাদের উইকেট পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। বাংলাদেশের স্পিনারদের পর পেসারদের দাপটে টস জিতে আগে ব্যাট করে ১৯৫ রানের বেশি করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ১৯৬।

মিরপুরে নিজের ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচে দ্যুতি ছড়িয়েছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। ১০ ওভার বোলিং করে ৩০ রান দিয়ে ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষের টপ ও মিডলঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে। ৬০টি ডেলিভারির মধ্যে ডট বল ছিল ৪১টি। মাশরাফীর দশ ওভারে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র দুটি। নিজেরে প্রথম ওভারের প্রথম বলে একটি চার ও শেষ ওভারের শেষ বলে একটি ছক্কা। রান আটকে আটকে বোলিং করে যাওয়াতেই এসেছে সফলতা।

ডট বল করে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়ায় বাংলাদেশ। শুরুতে সতর্ক হয়ে খেললেও রান বাড়ানোর তাড়নাতেই উইকেট বিলিয়ে আসেন ক্যারিবীয় ওপেনার কাইরেন পাওয়েল। ইনিংসের অষ্টম ওভারে সাকিব আল হাসানের অফস্টাম্পের বাইরের বল মিডঅফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গেলে টাইমিং হেরফের হয়। বল চলে যায় পয়েন্টে। পেছন দিকে দৌড়ে তালুবন্দী করেন রুবেল হোসেন। দুই অঙ্ক স্পর্শ করেই সাজঘরে ফেরেন পাওয়েল (১০)। স্পিনারদের হাতে নতুন বল তুলে দিয়ে যে ভুল করেননি মাশরাফী তার নজির দেখান সাকিব।

উইন্ডিজ শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন মাশরাফী। ড্যারেন ব্রাভোকে (১৯) বিভ্রান্তিতে ফেলে উইকেট আদায় করেন এ পেসার। ডট বলের বেড়াজাল থেকে বের হতে তুলে মারা ছাড়া উপায় ছিল না এ বাঁহাতির। মাশরাফীর ছোড়া ডেলিভারিটি স্লোয়ার ছিল, সেটি বোঝার আগেই তার ব্যাট চলে আসে বলের কাছে। বল আকাশে ভাসে কিছুক্ষণ। লং-অফ থেকে দৌড়ে আসেন তামিম ইকবাল। অসাধারণ ডাইভে বাজপাখির মতো উড়ে বল হাতে জমিয়ে অধিনায়কের ২০০তম ম্যাচে উপহার দেন প্রথম উইকেট।

দুই অঙ্ক পেরিয়ে যাওয়ার পর দুবার জীবন পাওয়া ব্রাভো সাজঘরে ফেরেন ৫১ বলে ১৯ রান করে। ব্যক্তিগত ১৩ রানে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে প্রথমবার জীবন পান এ ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। তখন অফস্টাম্পের বাইরে করা দ্রুতগতির বলে কাট করলে ব্যাকপয়েন্টে ক্যাচ ছাড়েন অতিরিক্ত ফিল্ডার হয়ে নামা আরিফুল হক। দলের রান তখন ৫৪।

পরে ১৯ রানের মাথায় আবারও জীবন পান ব্রাভো। রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। পরে অবশ্য আর রান যোগ করতে পারেননি ব্রাভো।

মোস্তাফিজ-রুবেল সম্ভাবনা জাগালেও তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচের মাধ্যমে অধিনায়কের ঝুলিতে গেছে ব্রাভোর উইকেট। জায়ান্টস্ক্রিনে তাকিয়ে পুরো দল আরেকবার যখন দেখছিলেন তামিমের ক্যাচটি, দর্শকগ্যালারিতে তখনও উৎসবের ঢেউ।

দর্শকের আনন্দ-উচ্ছ্বাস চলেছে পুরো ইনিংসজুড়েই। পরে আরও দুই শিকার করেন মাশরাফী। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া শাই হোপ মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে দ্বিতীয় সাফল্যের দেখা পান মাশরাফী। এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান করেন ৪৩ রান।

দলীয় রান তিন অঙ্ক পৌঁছানোর আগে শিমরন হেটমায়ারকে (৬) ফেরান মিরাজ। টেস্ট সিরিজের চার ইনিংসেই অফস্পিনার মিরাজের বলে সাজঘরে ফেরেন এ বাঁহাতি। বাংলাদেশ সফরে পঞ্চমবারের মতো এক বোলারের বলেই আউট হন হেটমায়ার।

ক্যারিবীয়দের রান যখন ১১৯; মাশরাফী আনেন ব্রেক-থ্রু। উইন্ডিজ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে (১৪) মিডঅফে দাঁড়ানো লিটন দাসের ক্যাচ বানান অধিনায়ক। ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ স্মরণীয় করেন তিন উইকেট নিয়ে।

দলের আর ৯ রান যোগ হতেই সাজঘরে ফিরে যান মারলন স্যামুয়েলস। ৪৮ বলে ২৫ রান করে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন। প্রথম উইকেটের মুখ দেখেন রুবেল।

ভয়ঙ্কর হতে থাকা সপ্তম উইকেট জুটি ভেঙে ম্যাচের প্রথম শিকারের দেখা পান মোস্তাফিজ। ৩৮ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলা রোস্টন চেজকে মিরাজের হাতে ক্যাচ বানান কাটার মাস্টার। ৫১ রানের জুটিটি ভাঙে ইনিংসের ৪৮তম ওভারে।

শেষদিকে কেমার রোচ ও কিমো পলের মারমুখী ব্যাটিংয়ে দুইশ পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগে। ২৯ বলে ৩৭ করে আউট হন পল আউট হলে হওয়ার পর আরও একটি উইকেট হারালে দুইশর আগেই থামে উইন্ডিজ।

ইনিংসের শেষ ওভারে মোস্তাফিজের কাটারের মুখে আড়াআড়ি ব্যাট চালান পল। ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছন দিকে হাওয়ায় ভাসে বল। পয়েন্ট থেকে পেছনে দৌড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মিরাজ। এক বল পরই দেবেন্দ্র বিশুর ফিরতি ক্যাচ নিয়ে নিজের তিন নম্বর শিকার বানান ফিজ। এ বাঁহাতি পেসার ১০ ওভারে দেন ৩৫ রান। ডট করেন ৩৩টি।