ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরে শুরু থেকেই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে এগিয়েছে আবাহনী। তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তাই অবাক করার মতো নয়। দলটির পেসার মাশরাফী পারফরম্যান্স যদিও বিস্ময়-জাগানিয়াই! ৩৪ পেরিয়ে গেছেন। বলে সেই তারুণ্যের ধার! মরা উইকেটে আগুন ঝরালেন লিগের পুরোটা জুড়েই। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বনে গেলেন। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক ক্যারিয়ারের এ বেলাতে এসেও পারফরম্যান্সকে তুলে নিলেন তরুণদের জন্য উদাহরণসম উচ্চতায়।
১৬ ম্যাচে নামের পাশে ৩৯ উইকেট লিখিয়ে লিগ শেষ করেছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। দেশের ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস রচনা করা এ পেসারের সাফল্যের পেছনে নেই গোপন কোন রহস্য। মাশরাফী মনে করেন, শৃঙ্খল থাকা আর পরিশ্রম করে যাওয়াতেই নামের পাশে উইকেটের সংখ্যাটা এত। বৃহস্পতিবার বিকেএসপিতে ট্রফি উঁচিয়ে উদযাপন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেটাই বললেন।
‘যেভাবে চাচ্ছিলাম, এবার সেভাবেই সবকিছু করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যেখানে ছিলাম, সেটা ধরে রাখা। ফিটনেসে যেন ঘাটতি না হয়, সেদিকে মনোযোগী হওয়া। এইসব জায়গায় কাজ করতে চেয়েছি, কখনোই চিন্তা করিনি উইকেট নিতে হবে।’
‘সাফল্যের পেছনে গোপন কিছুই নেই। পূর্ণ ফোকাস রেখেছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি না সময়টাতে। যে কারণে পুরো লিগেই আমার ফোকাস ছিল। এর বাইরে শৃঙ্খল ছিলাম। নিয়মিত জিম করেছি, যতোটুকু অনুশীলন দরকার, করেছি। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারগুলোও মেনে চলেছি। উইকেট পাওয়ার ব্যাপারে নিজেকে ভাগ্যবান বলতে হবে। কারণ উইকেট নিয়ে ভাবিনি।’ -যোগ করেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক।
এবারের প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ রান করেছেন আবাহনীর ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৬ ম্যাচে ৭৪৯। বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে খেলেছেন ১১৩ রানের ইনিংস। ৫০ সেঞ্চুরির এবারের লিগে শান্তর সেঞ্চুরি ৪টি। লিগে পারফর্ম করা অন্যদের পাশাপাশি সতীর্থ শান্তকে প্রশংসাতেই ভাসালেন ম্যাশ। ১৯ বছরের এ তরুণকে বড় স্বপ্ন দেখতে বলেছেন।
‘এখনই জাতীয় দলে চিন্তা করা খুব দ্রুত হয়ে যাবে। ওর কাছ থেকে যেটা প্রত্যাশা, সেটা যেন হারিয়ে না যায়। আমি নিশ্চিত শান্ত লম্বা রেসের ঘোড়া। বিপিএলে মোটামুটি পারফরম্যান্স করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে করছে। এটা ওর জন্য সেরা সময় নিজেকে দেখাশুনা করার। সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার। এখান থেকে যেন আরেক ধাপে নিয়ে টিকে থাকতে পারে, তেমনভাবে প্রস্তুত হতে হবে। যাতে দীর্ঘদিন দেশকে সার্ভিস দিতে পারে। স্বপ্নটা যেন ছোট না হয়।’
মাশরাফী এবারের পেয়েছিলেন দারুণ একটি দল। জাতীয় দলে খেলছেন, খেলেছেন, এমন ক্রিকেটারে পূর্ণ। তারকাসমৃদ্ধ দল বলতে যা বোঝায়, তার সবই ছিল আবাহনীতে। লিগের শিরোপাও গেছে নিজেদের ডেরায়। কাগজে-কলমে নাসির হোসেন অধিনায়ক হলেও ছায়া হিসেবে ছিলেন মাশরাফীও!