২০০৬ সালের ১৭ মার্চ। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী কেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচ। দিনটি যে টাইগারদের হতে চলেছে, সেটি বলে দিচ্ছিল শুরুর সকালই। তবে সেদিনই যে ওয়ানডেতে ম্যাজিক সংখ্যা ৩০০ ছুঁয়ে ফেলবে লাল-সবুজরা, ভাবতে পারেনি অনেকেই।
ওই ম্যাচের আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২৭২। আগেরটি ছাড়িয়ে যাবে সেটি প্রত্যাশিত ছিল দুর্দান্ত শুরুর পর। সেদিন তিনশ রানের মাইলফলক ছোঁয়া ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
১৬ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা মাশরাফী শেষ ওভারে মারেন তিনটি ছক্কা ও একটি চার। ওভারে আসে ২৩ রান। বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০১/৭। ওয়ানডেতে তিনশর মুখ সেটিই প্রথম দেখা।
মাশরাফী যখন ক্রিজে নামেন ৪৫.৫ ওভারে বাংলাদেশর সংগ্রহ ২৪২/৫। মাশরাফী ও রফিকের তাণ্ডবে শেষ ২৫ বলে দুই উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা তোলে ৫৯ রান। কী মারটাই না সেদিন মেরেছিলেন মাশরাফী। ব্যাটের সুইং, ফলো-থ্রু, শারীরিক ভাষা ছিল দুর্দান্ত। ব্যাট হাতে নড়াইল এক্সপ্রেসের সেই ইনিংসটি মহামূল্যবান হিসেবে থেকে যাবে টাইগার ক্রিকেটে।
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের পুরোটাই ছিল বাংলাদেশের। জাভেদ ওমর বেলিম ও শাহরিয়ার নাফীস ওপেনিং জুটিতে উপহার দেন ৯২ রান। ধীরগতিতে ব্যাট করে যাওয়া জাভেদ ৫৩ বল খেলে করে যান ২৮ রান। শাহরিয়ার ফিফটি পেরিয়ে এগোতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে।
তিনে নামা আফতাব আহমেদ সচল করেন রানের চাকা। জমে ওঠে জুটি। দুর্ভাগ্য শাহরিয়ারের। ৯১ রানের মাথায় হন রানআউট। ১১২ বলের ইনিংসে ছিল ১১টি চারের মার। দলের রান দুইশ পার করে আউট হন আফতাব। ৬৯ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মারেন তিনটি চার ও দুটি ছক্কা।
উইকেটে থিতু হয়ে গেলেও মোহাম্মদ আশরাফুল সেদিন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ২৪ বলে ১৮ রান করে আউট হন। মাশরাফীর সঙ্গে আগ্রাসন চালান মোহাম্মদ রফিক। এ বাঁহাতি খেলেন ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশ প্রথমবার পায় তিনশ রানের সংগ্রহ। নয়জন ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসলেও সেদিন ব্যাটিং করতে নামেননি অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন।
বোলারদের দাপটে কেনিয়া অলআউট হয় ১৭০-এ। ১৩১ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর সেটিই ছিল দুদলের প্রথম মুখোমুখি দেখা। ওই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে কেনিয়া কেটেছিল শেষ চারের টিকেট। সেমিফাইনালে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষেও পাল্লা দিয়ে লড়েছিল দলটি।
সেই স্টিভ টিকোলোর দল বাংলাদেশে এসে সমীহ তো পেলই না বরং চার ম্যাচের সিরিজে পেতে হয় হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। কেনিয়ার বিপক্ষে পরে আর কোনো ম্যাচই হারেনি বাংলাদেশ। অথচ শুরুর সাত দেখায় (১৯৯৭-২০০৩) বাংলাদেশের জয় ছিল মাত্র একটি। ১৯৯৮ সালে ভারতের হায়দরাবাদে, আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম জয় সেটি।