শুরু করেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। শেষ করেন লাসিথ মালিঙ্গা। একজন গড়েন, অন্যজন ভাঙেন। দুই ‘এম’ জোরেই ইংল্যান্ডকে হারায় শ্রীলঙ্কা। ৪ উইকেট নিয়ে মালিঙ্গাই ম্যাচের সেরা। তাদের এই জয়ে জমে গেছে বিশ্বকাপ। এক কথায়, শেষ চারের রাস্তা আবার অনেকটাই ‘ওপেন’ হয়ে গেছে।
বিশ্বকাপে মালিঙ্গা বরাবর সফল বোলার। এবার টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ততটা ফর্মে ছিলেন না। ওজন বেড়েছে। ফিটনেস কমেছে। কিন্তু আজও ফর্মে থাকা মালিঙ্গাকে সামলানো কতটা কঠিন, দেখালেন তিনি। এদিন বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ৫০তম উইকেটের মাইলফলক পেরিয়েছেন। তার ঝুলিতে মোট ৫১ উইকেট। শুক্রবার লিডসে ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ৪৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। তার শেষ ওভারে স্টোকসের ক্যাচ না পড়লে মালিঙ্গাই ম্যাচটা জিতিয়ে দিতে পারতেন।
এই বিশ্বকাপে ইংলিশ দলকে কাপ জেতার অন্যতম দাবিদার বলে ধরা হচ্ছিল। দেখালেন এখনও তিনি ফারাক গড়ে দিতে পারেন। এই ছত্রিশেও! মালিঙ্গা একাই হারিয়ে দিলেন বিশ্বকাপের হট-ফেভারিট ইংল্যান্ডকে। সেইসঙ্গে কাপযুদ্ধ জমিয়ে দিলেন। অস্ট্রেলিয়া, ভারত আর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরের তিন ম্যাচ ইংলিশদের। এই তিন ম্যাচে হারলে কিন্তু আয়োজকরা ব্যাপক চাপে পড়ে যাবে।
সেসব পরের কথা, লিডস অবশ্য মালিঙ্গাময়। জেমস ভিন্স, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, জস বাটলারের উইকেট নিয়ে ভেঙে দেন ইংলিশ দলের মেরুদণ্ড। হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করে বিশ্বকাপে ফিরে এসেছে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের সেরা মালিঙ্গা বলেছেন, ‘বেন স্টোকস কেমন খেলোয়াড়, কেমন বড় শট নিতে পারে, আমরা খুব ভালো করেই জানতাম। আর তাই নিজেরা যে পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলাম মাঠে, সেটাই কার্যকর করার চেষ্টা করেছি।’
বিশ্বকাপে বল হাতে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলছেন মালিঙ্গা। সব মিলিয়ে ৫১ উইকেট। তার আগে রয়েছেন ওয়াসিম আকরাম (৫৫), মুত্তিয়া মুরালিধরন (৬৮) ও গ্লেন ম্যাকগ্রা (৭১)।
মালিঙ্গা বলেছেন, ‘আমরা জানতাম যে, ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। সেই কারণে লাইন ও লেংথের উপর জোর দিয়ে গেছি। স্লোয়ার আর বাউন্সারে বৈচিত্র রাখার চেষ্টা করেছি। ভালো বোলিংয়ের ফসল পেলাম আমরা।’
শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে বলেছেন, ‘মালিঙ্গা ভালো শুরু করেছিল। তাকে যে কারণে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছি। সেইসঙ্গে বোলাররা সবাই চমৎকার পারফর্ম করেছে।’
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান মালিঙ্গার বোলিং নিয়ে লিখেছে, মালিঙ্গা আবার প্রমাণ করলেন তিনি বল হাতে এখনো মাস্টারই।
এই হারের পরও ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়াবে, বলছেন ইয়ন মরগান। ইংলিশ অধিনায়কের কথায়, ‘এই হারটা অত্যন্ত হতাশার। ব্যাটিং লাইন-আপ সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। তবে এখানে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
তবে মরগানের কথায় খুব একটা ভরসা পাচ্ছে না ইংলিশরা। সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন যেমন বলেছেন, ‘হতাশাজনক হার ইংল্যান্ডের ‘এক পতন’ প্রকাশ করেছে। চাপের মুখে দলের খেলোয়াড়দের নেয়া সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন তিনি।
মরগানের দলের সমালোচনা হচ্ছে তাদের মিডিয়াতেও। ডেইলি মেইল লিখেছে, ইংল্যান্ডের পার্টি নষ্ট করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দ্য সান শিরোনাম, ‘শ্রীলঙ্কার কাছে হতাশার হারে ইংল্যান্ডের সেমির স্বপ্ন এখন অথৈই ঢেউয়ে।’
একটি প্রশ্ন দাঁড়া করে দিয়ে টেলিগ্রাফ লিখেছে, ‘হতাশার হার ইংল্যান্ডের জন্য একটি বড় উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে: তারা কী চাপের মুখে ফিরতে পারবে?