বাজেট মতানৈক্যে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাবশ্যকীয় বাদে বাকি সব সরকারি কার্যালয় বন্ধ বা গভর্নমেন্ট শাটডাউন প্রক্রিয়া ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম আপাতত আংশিকভাবে বন্ধ করেছে। তবে এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে প্রভাবটা আরও অনেক বেশি অনুভব করবে দেশের মানুষ।
শাটডাউন চলাকালে মার্কিন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করবেন। ডাক ব্যবস্থাও চলবে আগের মতোই। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার পর্যন্ত যদি শাটডাউন গড়ায় তবে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ লাখ বেসামরিক ফেডারেল কর্মীর প্রায় অর্ধেকই নিজের কাজ করতে যেতে পারবেন না।
মার্কিন ফেডারেল সরকারের সরকারের মূল যে অংশগুলো সিনেটের এ সিদ্ধান্তের কারণে প্রভাবিত হবে তার মধ্যে রয়েছে:
অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা
যুক্তরাষ্ট্রের রাজকোষ বিভাগের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা শাটডাউন পরিকল্পনার অনুসারে, দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা’য় (আইআরএস) কর্মরত ৮০ হাজার ৫৬৫ কর্মীর প্রায় ৪৪ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার আইআরএস কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেবে বিভাগ।
কর আইনের রিপাবলিকান নীতিনির্ধারকরা লাখ লাখ কর্মজীবী আমেরিকানকে আগামী মাসের মধ্যে কর কমিয়ে বেশি বেতন হাতে তুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আইআরএস বিভাগের প্রধান মারকাস উয়েনস আশঙ্কা করছেন, শাটডাউন বেশিদিন থাকলে এই ওজন বাড়া বেতনের চেকটা হাতে পেতেও দেরি হবে তাদের।
স্বাস্থ্য ও মানবীয় সেবা বিভাগ
এ বিভাগের ৮০ হাজারেরও বেশি কর্মচারীর প্রায় অর্ধেককে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। বিভাগের মূল কর্মসূচিগুলোর জন্য আগে থেকেই ভিন্নভাবে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, যা নতুন বাজেটের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই সেগুলোই শুধু চালু থাকবে শাটডাউনের সময়টায়। এর মধ্যে রয়েছে বয়স্ক, অক্ষম ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ইনস্যুরেন্স সেবা মেডিকেয়ার এবং মেডিকএইড।
এছাড়াও শিশুদের স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্পটি আপাতত বরাদ্দ পাবে যদি শাটডাউন খুব বেশিদিন স্থায়ী না হয়। তবে মৌসুমী ফ্লু চিকিৎসা কার্যক্রমসহ বেশ কিছু কর্মসূচি বন্ধ রাখা হবে। রোগের মহামারী চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রকল্পগুলোও বন্ধ থাকবে।
বিচার বিভাগ
মার্কিন বিচার বিভাগের প্রায় এক রাখ ১৫ হাজার কর্মীর অনেকেই জাতীয় নিরাপত্তা ও জনসুরক্ষার অধীনে শাটডাউনের সময়ও দায়িত্ব পালন করবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ তদন্তকারী রবার্ট মুয়েলারের টিমও কাজ চালিয়ে যাবে। বাকি ৯৫ হাজারের বেশি কর্মীকে অব্যাহতি দেয়া হবে।
পররাষ্ট্র বিভাগ
পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিংসহ বেশ কিছু কর্মকাণ্ড শাটডাউনের সময়ও চলবে। ওয়াশিংটনে হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্বজুড়ে তিন শতাধিক মার্কিন দূতাবাস, কনস্যুলেট ও কূটনৈতিক মিশনের তালিকা করে আপাতত জরুরি নন এমন কর্মীদের অব্যাহতি দেয়া হবে।
প্রতিরক্ষা বিভাগ
মার্কিন সামরিক বাহিনী বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে চলমান যুদ্ধগুলো শাটডাউনের সময়ও চালিয়ে যাবে। তবে কংগ্রেসে বাজেট পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত সেনাসদস্যরা বেতন পাবেন না। ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ড বেশিরভাগই বন্ধ থাকবে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা
যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীবাহিনী এই সময়টায় অনেক ছোট করে ফেলা হবে। একেবারে হাতেগোনা কিছু মানুষ রেখে ছুটি দিয়ে দেয়া হবে বাকিদের। তবে যারা কাজ করবেন তারাও নিয়মিত বেতন পাবেন কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মীকেই আবশ্যক হিসেবে মনে করা হয়। সুতরাং অন্যান্য কার্যালয় বন্ধ থাকলেও এরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন। অর্থাৎ শুল্ক, সীমান্ত রক্ষা, যানবাহন নিরাপত্তা প্রশাসনের কর্মীরা প্রায় সবাই-ই থাকছেন। অভিবাসন ও শুল্ক আরোপ বিভাগের ৭৮ শতাংশ (১৫ হাজার) এবং সিক্রেট সার্ভিসের ৫ হাজার ৭শ’র বেশি কর্মী এ সময় কাজ চালিয়ে যাবেন।
স্বরাষ্ট্র বিভাগ
জাতীয় উদ্যান ও অন্যান্য গণ-এলাকাগুলো যতটা সম্ভব খোলা থাকবে। গতবার অবশ্য এগুলোও বন্ধ ছিল। এছাড়া বিভিন্ন স্মৃতি জাদুঘরও খোলা থাকবে। তবে রাস্তাঘাট খোলা তাকলেও ক্যাম্পিং এলাকা, ফুল-সার্ভিস রেস্টরুমসহ যেখানে যেখানে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন সেগুলো বন্ধ থাকবে।
এছাড়া পরিবহন বিভাগের ৩৪ হাজার ৬শ’ কর্মী শাটডাউনেও কর্মরত থাকবেন। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, তাদের দেয়া সেবার পরিসর কমিয়ে আনতে হচ্ছে বলে ভর্তি থাকা রোগীরা পড়তে যাচ্ছেন বিপদে। পরিবেশ রক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, অল্প কিছু সময় সক্রিয় থাকার মতো যোগান রয়েছে তাদের। কিন্তু শাটডাউন বেশিদিন চললে তারা অফিস বন্ধ করতে বাধ্য হবে।