ডেঙ্গু নিয়ে দেশের মানুষ আতঙ্কিত মন্তব্য করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট বলেছেন, মশা নির্মূলে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ওষুধ আনুন। আমরা কার্যকর ওষুধ চাই।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিক এই আদেশ দেন।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েরা ফায়রোজ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রেজা ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক এনাম টিপু।
গত ২২ জুলাই হাইকোর্ট ঢাকা মহানগরীর ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহী রোগের বিস্তার রোধে মশা নির্মূলের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে দুই সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন।
সেই অনুযায়ী দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ বলেন, আমাদের এ সিটি করপোরেশনে এক কোটির বেশি লোক। আর ১০টি জোনে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে জনবল মাত্র ৪২৯ জন।
তখন আদালত বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এত কেন?
তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। ক্লাইমেট সেনসেটিভ ডিজিজ। আর এ বছর আমাদের দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ও সর্বোচ্চ উষ্ণতা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রভাব চলছে।
এ সময় আদালত বলেন: ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না কেন? গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা হচ্ছে এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখনই ওষুধ আনি তখনই সরকারি দুটি ল্যাবে টেস্ট করে পজেটিভ সার্টিফিকেট পেলেই তা ব্যবহার করা হয়।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না, তখন অন্য জায়গায় দ্রুত টেস্ট করলেন না কেন? এসব কি আমাদের বলে দিতে হবে? হোয়াট ইজ দ্যা প্রবলেম? আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশের স্বাস্থ্য দেখবে। কারণ যে অবস্থা হচ্ছে এটা কেবল সিটি করপোরেশনের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে।
এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন আদালতকে বলেন, আমরা নতুন ঔষধ কিনব। এজন্য কারিগরি কমিটি করেছি। সমস্যা হচ্ছে, পিপিপি’র (পাবলিক প্রাইভেট প্রকিউরমেন্ট) মাধ্যমে করতে হয়। সেখানে অনেক সময় লাগে। তবে ডিপিএম’র মাধ্যমে কিনলে তাড়াতাড়ি ঔষধ পেয়ে যাব।
এ সময় আদালত তার মৌখিক আদেশে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ আনবেন। আমরা ওষুধ চাই। কী প্রক্রিয়ায় আনবেন সেটা হলফনামা আকারে দুপুরের মধ্যে জানান।
‘‘সারাদেশের মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত। ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত। সবাই যদি হাসপাতালে যেত তাহলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি দেখা যেত।’’
এর আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও এডিস মশা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৪ জুলাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।