ঈদের জন্য দুটি নাটক নির্মাণ করেছেন নাট্য নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি। দুটি নাটক হচ্ছে ‘আপন’ এবং ‘অদ-ভূত’। এরই মধ্যে তার পরিচালনায় ‘আপন’ প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তারিক আনাম খান ও আফরান নিশোর বাবা-ছেলের সম্পর্ককে তিনি অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করেছেন নাটকটিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আপন’ নিয়ে বইছে প্রশংসার জোয়ার। এই কাজটির সাফল্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ খ্যাত নির্মাতা অমির সঙ্গে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের:
ঈদের জন্য মাত্র দুটি নাটক নির্মাণ করলেন?
চার-পাঁচটি কাজ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু লকডাউন ও বৃষ্টির কারণে সম্ভব হয়নি। ‘আপন’ ও ‘অদ-ভূত’ এই দুটি কাজ থাকছে।
‘আপন’ ব্যাপকভাবে প্রশংসা পাচ্ছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
যে কাজটি করি সেটির মাধ্যমে সবসময় মানুষকে বিনোদন দিতে চাই। শুধু হাসিয়ে বিনোদন দিতে হবে এমনটা নয়। মানুষকে কাঁদিয়ে কিংবা রাগিয়েও বিনোদন দেয়া যায়। ‘আপন’র মাধ্যমে এমন গল্প বলেছি, দর্শক দেখে যেন রিলাক্স অনুভব করেন। ঈদের সময় কোনোভাবেই দর্শকদের বিরক্ত করতে চাইনি। প্রচুর ফোন পাচ্ছি যেটা আগে টিভিতে ভালো নাটক প্রচারের পর পেতাম। যারা ফোন করছে আবেগে আপ্লুত হচ্ছে। এটা আমার জন্য ব্লেসিং।
‘আপন’-এর গল্পের প্লটটা মাথায় গাঁথলেন কীভাবে? গল্পটা কি কাল্পনিক?
কাল্পনিক নয়, চারপাশ থেকে নেয়া। আমার কাছের একজন মানুষ আছেন, যার বাবা হুট করে বিয়ে করেন। পরে তাদের পরিবারের সমস্যা তৈরি হয়। কাছ থেকে দেখেছি। বাবা-ছেলের মধ্যে খুনসুটি, বিভিন্ন না বলা গল্প থাকে সেই বিষয়গুলো মিশ্রণ করে ইমোশনাল কাজের চেষ্টা করেছি। এই চিন্তা থেকে আপনের গল্প বলেছি। এছাড়া নিজে একাকীত্ব ফিল করে শেষ বয়সে নিজেকে নিয়ে গেছি, চিন্তা করে তারিক আনাম স্যারের চরিত্রটি আনি এবং নিজেকে সন্তানের জায়গায় নিয়ে আফরান নিশো ভাইয়ের চরিত্রটি আনি। গল্পটা এভাবেই সাজাই।
গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলে, আপনি যেটাই বানান সেটাই দর্শক গ্রহণ করে! ম্যাজিক আছে নাকি কোনো?
সবসময় চেষ্টা করি আমার চোখে দেখা সহজসরল গল্প বলতে। গল্পটাকে প্রাণবন্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করি। কাস্টিং, এডিটিং থেকে আমার টিমের সবকিছু মনিটরিং করি। দর্শকদের হয়তোবা আমার প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে। তাই আমার কাজের জন্য অপেক্ষা করেন ও প্রকাশের পর গ্রহণ করেন। যখনই দেখি কাজ দর্শক গ্রহণ করেছেন তখন টেনশন আরও বাড়ে। কারণ, পরের কাজ নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করা চেষ্টা বাড়াতে হয়। এতে আমার খবর হয়ে যায়! আমি মনে করি চেষ্টা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আল্লাহ আমাকে সেই মেধা দিয়েছেন, একের পর এক অনুশীলন করে যাচ্ছি। টোটাল বিষয়টি আমার কাছে ব্লেসিং।
প্রশংসার পাশাপাশি আপনাকে অনেক সময় সমালোচিত হতে দেখা গেছে। ‘ভাইরাল গার্ল’, ‘আপন’ দেখার পর সমালোচনা কিছুটা কমেছে নাকি?
যারা সমালোচনা করতো তারা এখনো করে। আগামীতেও করবে। সমালোচনা থাকবেই। একেক জন মানুষ একেক ধরনের কাজ পছন্দ করে। কারও কারও কাছে আশফাক নিপুণ ভাই অনেক পছন্দের। কারণ উনি সমাজের গল্প বলেন, থ্রিলার টাইপের। আমি তেমন কোনো থ্রিলার গল্প বানায়নি। আবার অনেকের কাছে আমি প্রিয়। কারণ, আমি তাকে সঠিক বিনোদন দিচ্ছি, দিনশেষে রিফ্রেশ এনে দিচ্ছি। যার টেস্ট যেমন সে সেটাকে ভালো বলবে, অন্যদিকটাকে খারাপ বলবে। এটাই স্বাভাবিক। যতটুকু পারি নিজে ব্রেইন ওয়ার্ক করি। ভিন্নতা দেয়ার চেষ্টা থাকে সবসময়।
আপনার সহকর্মীরা অনেকেই বলে থাকেন, অমির নাটকে বাজেট বেশি থাকে। এজন্যই কাজগুলো তুলনামূলক ভালো হয়?
চেহেরা নয়, আমাকে বাজেট দেয় কাজ দেখে। সবচেয়ে কম বাজেটে কাজ করতে করতে আজকে হয়তো মিনিমাম ক্যাটাগরিতে ঠিকঠাক বাজেট পাচ্ছি। দর্শক, প্রযোজক, এজেন্সি, চ্যানেল সবার কাছে এটা আমি কাজ করতে করতে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বাজেটের সিরিয়াল ছিল ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ (সিজন ওয়ান)। এরপর যখন দর্শক ভালোবাসা দিয়েছেন ‘সিজন টু’-তে অটোম্যাটিক বাজেট বেড়েছে। এই সিজন যখন গ্রহণযোগ্যতা পায়, তখন ‘সিজন থ্রি’-তে বাজেট বেড়েছে। ব্যবসায় পণ্য ভালো হলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এটা একটি সাইকেল। অনেক সিনিয়র মেধাবী পরিচালক আছেন তারা আমার তুলনায় বেশি বাজেট নিয়ে কাজ করেন। যোগ্যতার উপর সম্মানি নির্ভর করে। প্রযোজকের কাছ থেকে বাজেট নিয়ে সঠিকভাবে যদি ব্যবহার না করি তাহলে কেন প্রযোজক আমাকে বাজেট দিবে? আমার সহকর্মী যারা বলে থাকেন তারা কেন বাজেট পাচ্ছে না? এটাও তো একটা প্রশ্ন! আমার উপর আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে বলেই আমি বাজেট বেশি পাই। যারা এটা নিয়ে কথা বলেন তারা আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারলে তারাও পাবেন। তবে আমি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বাজেট নিয়ে নাটক বানাই বিষয়টি মোটেও এমন নয়।
নাটকে আপনি বেশ দর্শকপ্রিয়। সিনেমা নির্মাণ নিয়ে আপনার ভাবনা বা কবে সিনেমা বানাবেন পরিষ্কার করবেন?
এখনকার কাজে আমার যে চেষ্টা থাকে, সিনেমা বানাতে গেলে সেই চেষ্টা থাকবে। কোনো কাজকে ছোট করে দেখি না। নাটক বা ওয়েব কনটেন্ট বানাতে ঠিকঠাক সাপোর্ট পাচ্ছি বলে বানাতে পারছি। সিনেমা বানাতে গেলেও আমার ঠিকঠাক সাপোর্ট দরকার। সিনেমা বানানোর জন্য অনেকেই যোগাযোগ করেন। কিন্তু শুধু টাকা হলেই সিনেমা হয় না। সিনেমাতে একজন প্রযোজকের অবদান বিশাল। যেটা আমাদের দেশে খুব মিসিং। অনুভব করি, ফিল্মে গেলে হয়তো অনেক বেশি কম্প্রোমাইজ করতে হবে। যেটা আমি পারবো না। আমার জীবনের প্রথম সিনেমাতে আমি কোনো রকম ছাড় দিতে পারবো না।