চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মানবতার কবির জন্মবার্ষিকী আজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। দ্রোহ প্রেম সাম্য ও মানবতার কবির জন্মবার্ষিকীর দিনটি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় উদযাপন করছে জাতি।

সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী আয়োজন। এ বছর মূল আয়োজন হবে নজরুলের অন্যতম স্মৃতি বিজড়িত স্থান চট্টগ্রামে। এই প্রথম রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামে জাতীয় পর্যায়ে নজরুলের জন্মবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বছর জাতীয় কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা রোধে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা’। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বেলা ১১টায় এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলের নেতা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবিনশ্বর উপস্থিতি বাঙালি জাতির প্রাণশক্তিকে উজ্জীবিত রাখবে। তরুণ সমাজকে শৃঙ্খল ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে এবং অজানাকে জয় করতে তিনি (নজরুল) পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় কবি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি।’

১৮৯৯ সালের ২৪ মে, বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে তার জন্ম। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। নজরুলের নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মা জাহেদা খাতুন।

১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি।

নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায়, কবর দিও ভাই/যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।’ কবির সেই শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি’লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেন। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

কর্মসূচি:মূল অনুষ্ঠান হবে চট্টগ্রামে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্মারক বক্তব্য দেবেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক আবুল মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনার পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইন্সটিটিউটের আয়োজনে ৩০ মিনিটের একটি সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। দেশের বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পীরা এতে গান পরিবেশন করবেন।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৬ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহ।

এছাড়া সাম্য ও মানবতার কবি নজরুল স্মরণে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে এবি ব্যাংক-চ্যানেল আই নজরুল মেলা। বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয়ে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে মেলা। মেলা আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই।

বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় নজরুল ইনস্টিটিউট জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে। নজরুল ইনস্টিটিউট কাজী নজরুল ইসলামকে বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে কবির ছবি, পোস্টার ও বই প্রদর্শনীর আয়োজন করবে এবং গণগ্রন্থাগার অধিদফতর বই প্রদর্শনী, পাঠ প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে। ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপন করা হবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে।

যেসব জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নজরুল জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে না, সেসব জেলার জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদ্যাপন করবেন।

জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলসমূহ সম্প্রচার করবে।

ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও কুমিল্লার দৌলতপুরে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তার ১১৭ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।