চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মানবতাবিরোধী অপরাধ: এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালকের বিচার শুরু

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচার শুরু হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে বুধবার অভিযোগ গঠন করেন। আগামী ২৪ নভেম্বর এই মামলার সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ধার্য করেন।

অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলো। তবে অভিযোগ গঠনের আদেশের আগে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলাটি পরিচালনা করছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন এবং তাপস কান্তি বল। আর আসামি ওয়াহিদুল হকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিজানুর রহমান ও আব্দুস সোবহান তরফদার।

অভিযোগে যা বলা হয়েছে
ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সলের ২৮ মার্চ আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার বেসামরিক জনগণ রংপুর সেনানিবাসের দক্ষিণে কতোয়ালী থানা এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখানে তারা ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সশস্ত্র সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার পক্ষে নিজেদের প্রতিশ্রুতি জানান দিচ্ছিল।

সেদিন অভিযুক্ত মেজর আসামি মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের নেতৃত্বে সশস্ত্র সেনাবাহিনী (তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রংপুর ক্যান্টনমেন্টের ২৯ ক্যাভালরি (অশ্বারোহী) রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন সজ্জিত মেশিনগান দিয়ে জড়ো হওয়া মুক্তিকামী জনগণের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ বেসামরিক লোককে হত্যা করে।

যাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের নাম-পরিচয় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তুলে ধরেছে প্রসিকিউশন। শুধু তাই না, পাকিস্তানি স্বশস্ত্র বাহিনীর হামলায় সেদিন যারা আহত হয়েছিলেন লে. কর্নেল শাগের সেসব আহতদের ফাঁসিও দিয়েছিল। ফলে অভিযুক্ত মেজর মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক সক্রিয়ভাবে এ ‘গণহত্যায়’ অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও ‘অন্যান্য অমানবিক আচরণ’, ‘নির্যাতন’, ‘হত্যা’র মাধ্যমে ১৯৪৩ সালের জেনেভা কনভেনশনের ৩(২) (কে) (ই) (জি) (জ) ধারা লঙ্ঘন করে অন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ১৯৭৩ ২০(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এর আগে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তালিকাভুক্ত করা হয়। তারপর সে অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু হয়।  পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত বছরের ২৪ এপ্রিল বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরের দিন ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এই মামলার তথ্য সূত্রে জানা যায়, ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তিনি বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটান্ট হিসেবে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সেসময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটনে অতিরিক্ত কমিশনার, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি এনএসআই এর পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সালে তিনি পুনঃনিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।