চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাবেন কিভাবে?

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে নোট-গাইডের পাশাপাশি কোচিং বন্ধ হচ্ছে। নতুন আইনে এগুলো থাকবে না।

শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, যেকোনো ধরনের গাইড, নোট ও কোচিং বন্ধ করতে হবে।
খুবই ভাল এবং সাধুবাদ পাবার মত উদ্যোগ।

কিন্তু এটা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেটা দেখার বিষয়। কারা এ ব্যাপারে কঠোর হবে? কিভাবে সম্ভব?

যেখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এসব গাইড বই ছাপানো হচ্ছে এবং সফলতা পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা কিভাবে এ ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবেন। কারণ একবার একটি গাইড বই বের করলে পরবর্তীতে শুধু নতুন করে নতুন বছরের জন্য কিছু পাতা সংযোজন করলেই হল। পৃষ্ঠা সংখ্যা বেড়ে মূল্যটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ব্যবসা রমরমা।

সেই রমরমা ব্যবসা থেকে কিভাবে নিজেদের গুটিয়ে রাখবেন ব্যবসায়ীরা? বা বলা যায় এভাবে, সরকার কিভাবে তাদের কঠোর হাতে দমন করবেন?, যাতে কেউ গোপনে গাইড বই না ছাপতে পারেন। আমাদের এখানে অনেক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এইসব গাইড বইয়ে কখনো নামে কখনো বেনামে নিজেদের মেধা বিনিয়োগ করে থাকেন। সেটা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে।তারাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে যুক্ত থাকেন।
এসব বন্ধের আগে প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে কিনা শিক্ষার্থীরা সেটা নিশ্চিত করা। ক্লাসে যদি একজন শিক্ষক পুরো সময়টায় শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও সহজভাবে পাঠদান করেন তা হলে কি আর গাইড বা নোট বইয়ের প্রয়োজন পড়ে? সেই কাজটি যদি সরকার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি ঠিকমত দেখাশোনা করেন তা হলেই যথেষ্ট। তা না করে এখন কি করেন একজন শিক্ষক? তিনি ক্লাসে আসেন। তার নিয়ম মত করে গড়পরতা পড়িয়ে যান। কেউ বুঝলো কি বুঝলো না সেটা দেখভাল করা তার কাজের মধ্যে পড়ে না, এমন ভাব করে ঘন্টা বাজার সাথে সাথে ক্লাস থেকে বিদায় নেন। কোনো শিক্ষার্থী ঠিকমত পড়া না বুঝলে সমস্যা নেই। কারণ বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা তার কাছে পড়বে। আর তার কাছে না পড়ে অন্য কারো কাছে পড়লে পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগও শোনা যায় কখনো।

অন্যদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যঙের ছাতার মত কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। সরকারিভাবে এগুলোর কোনো পরিসংখ্যান নেই। কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই একশ্রেনীর মানুষ ব্যবসা হিসেবে শিক্ষাকে বেছে নিয়েছে। বলা বাহুল্য, বেশ জাঁকিয়ে বসে কেউ কেউ এ ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। এসব কোচিং সেন্টারের পেছনে অনেক প্রভাবশালীরা জড়িত থাকেন। কারণ তারা জড়িত থাকলে প্রশাসনিকভাবে অনেক ফায়দা পাওয়া যায়।
এসব কোচিংএ পড়াশোনার তেমন কোনো বালাই নেই (তবে এক্ষেত্রে দুএকটি কোচিং সেন্টার বাদ)। পুরোনো নোট শুধু ফটোকপি করে বিতরণ করা হয়। সেই ফটোকপি গিলে পরীক্ষার খাতায় ঢেলে দিয়ে বছরের পর বছর আমাদের ছেলেমেয়েরা জিপিএ -৫ পেয়ে বেড়ে উঠছে। আমরা অভিভাবকেরা মুগ্ধ, আহা! আমার ছেলে আমার মেয়ে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, এই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাবেন কিভাবে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)