বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান কমাতে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের। কিন্তু এমন ম্যাচে কেউই জিততে পারেনি। রিয়ালের ঘরের মাঠ বার্নাব্যুতে মাদ্রিদ ডার্বিতে ১-১ গোলে ড্র করেছে দুদল। স্বাগতিকদের হয়ে গোল করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর অ্যাটলেটিকোর হয়ে গ্রিজম্যান।
লা লিগার চলতি মৌসুমে প্রথম ডার্বিতে অ্যাটলেটিকোর মাঠে গোলশূন্য ড্র করেছিল রিয়াল। ঘরের মাঠে সবশেষ চারটি ডার্বিতেই জিততে পারেনি তারা। এরমধ্যে তিনটিতে হার ও একটিতে ড্র। এবারও ড্র করল গ্যালাকটিকোরা। যা লা লিগার ইতিহাসে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে সবচেয়ে খারাপ ফল।
জয়-পরাজয়ের মোট হিসাবে এগিয়ে থেকেই মাঠে নেমেছিল রিয়াল। লা লিগায় অন্য যেকোনো দলের চেয়ে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে বেশি ম্যাচ জেতার রেকর্ড শুধু রিয়ালেরই। এই ম্যাচের আগে ১৬১ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ৮৬টিতে। আর সব প্রতিযোগিতা মিলে ২১৯ ডার্বিতে ৫০ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে গ্যালাকটিকোরা। অর্থাৎ, ১০৯টি ম্যাচে জয়।
এমন ম্যাচের শুরু থেকেই শরীরী খেলা খেলে দুদল। তার মধ্যেই ৭ মিনিটের মাথায় গোল পাওয়ার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল রিয়াল। টনি ক্রুজের কাছ থেকে বল পেয়ে জোড়াল শট নিয়েছিলেন মার্সেলো। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় সেটা ঠেকিয়ে দেন অ্যাটলেটিকো গোলকিপার ইয়ান ও’ব্লাক।
দুই মিনিট পর আবারও সুযোগ আসে রিয়ালের সামনে। এবার গ্যারেথ বেলের হেড থেকে বল পেয়ে শট নেন টনি ক্রুজ। সেই বল অ্যাটলেটিকো ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে আসে রোনালদোর কাছে। একেবারে গোলমুখ থেকে বলে টোকা মারেন সিআর সেভেন। কিন্তু আবারও ও’ব্লাকের চওড়া হাতে রক্ষা।
১২ মিনিটের সময় রিয়ালের একটি জোড়াল পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। এরপর ২০ মিনিটে রোনালদোর বাঁ-পায়ের বুলেট শট ঠেকিয়ে দেন অ্যাটলেটিকো গোলকিপার। ২৮ মিনিটে রাফায়েল ভারানেকেও গোলবঞ্চিত করেন ও’ব্লাক।
পাল্টা আক্রমণে ৩০ মিনিটের সময় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় অ্যাটলেটিকো। কোকে এবং গ্রিজম্যানের সাথে বল দেয়া-নেয়ার পর গোলমুখে গিয়ে কেইলর নাভাসের কাছে আটকে যান ডিয়েগো কস্তা। ১২ মিনিট পর অ্যাটলেটিকোকে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বাঁচায় গোলবার। মার্সেলোর বাঁকানো শট প্রতিহত হয় বারে। ফিরতি বলে শট নিয়েছিলেন কারভাহালও। কিন্তু আবারও দেয়াল সেই ও’ব্লাক। দুদলের শারীরিক যুদ্ধের মধ্য প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য।
দ্বিতীয়ার্ধে দুদলই যেন পণ করে নামে। ৫৩ মিনিটে প্রথমে রিয়ালকে এগিয়ে দেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোনালদো। আগের ৯ ম্যাচে ১৮ গোল পাওয়া পর্তুগিজ তারকা ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। বেলের ক্রস থেকে বল পেয়ে সুযোগ সহজেই কাজে লাগান তিনি।
লিডটা অবশ্য বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি রিয়াল। ৫৭ মিনিটে অ্যাটলেটিকোকে সমতায় ফেরান গ্রিজম্যান। ভিটোলোর সঙ্গে বল দেয়া-নেয়ার পর বাঁ-পায়ের আলতো শটে বল জালে জড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড।
দুই মিনিট পরে আবারও এগিয়ে যেতে পারত অ্যাটলেটিকো। সাউলের কাছ থেকে পাস পেয়ে গোলের ১২ গজ দূর থেকে বুলেট গতিতে শট নেন কোকে। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় তা ঠেকিয়ে দেন কেইলর নাভাস।
৭৬ মিনিটে বেলের একটি হেড অল্পের জন্য পাশ কাটিয়ে বাইরে চলে যায়। তার আগে মার্সেলোর একটি নিচু শটও ভেস্তে যায় অ্যাটলেটিকোর ডিফেন্স দেয়ালে। এর আগে ৬৩ মিনিটে রোনালদোকে উঠিয়ে তার জায়গায় করিম বেনজেমাকে নামান জিদান। এসময় বার্নাব্যুর অবাক ও হতাশ সমর্থকদের অনেককে মাথায় হাত দিতে দেখা যায়।
৮৫ মিনিটে গোলের একটা ক্ষীণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন বেল, কিন্তু শেষপর্যন্ত কাজের কাজটা করতে পারেননি। শেষ পাঁচ মিনিটে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হলেও গোলের মুখ খুঁজে পায়নি কোনো দলই।৬৯ শতাংশ বল দখল রেখেও পাঁচ বছর ধরে লিগ ডার্বিতে জয় না পাওয়া রিয়াল জিততে পারল না এবারও। শেষ মিনিটে রামোসের একটি ফ্রি-কিক ও’ব্লাক ঠেকিয়ে দিলে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।
৩১ ম্যাচ শেষে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে বার্সা অন্যদের চেয়ে অনেক উপরে। সমান সংখ্যক ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ৬৮। আর তিনে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৬৪। এক পয়েন্ট কম নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে ভ্যালেন্সিয়া।