চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ কি ফিলিপিন্সের পথে?

মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ কি ফিলিপিন্সের মতো চরম পথ অনুসরণ করছে?

কয়েকদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ মতো কঠোর অবস্থানে রয়েছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। প্রতিদিনই আসছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ীদের নিহত হওয়ার খবর। গত কয়েকদিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সংখ্যা ২১।

এর আগে এরকম অভিযান দেখা গিয়েছিল ফিলিপিন্সে, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বাংলাদেশও কি মাদক নির্মূলে একই পথ অনুসরণ করছে? সাম্প্রতিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে এরকম প্রশ্ন উঠছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলছে: ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে ঘোষিত মাদকবিরোধী অভিযানে মারা যায় ৪ হাজারের মতো মাদক ব্যবসায়ী। দুতার্তে প্রশাসনের নিজস্ব প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বরের মধ্যে তিন হাজার ৯৬৭ মাদক বিক্রেতাকে হত্যার কথা স্বীকার করা হয়।

তবে, বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন মাদকবিরোধী চলমান অভিযানকে ফিলিপিন্সের সঙ্গে তুলনা করতে রাজি নয়।

ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত, ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: বাংলাদেশ কি ফিলিপিন্সের পথ অতিক্রম করছে?

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: আমরা এটা বলবো না, কারণ ওদের একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিল। আর আমাদের এখানে গত দুই বছরের পুলিশ সপ্তাহে প্রধান প্রতিপাদ্যই ছিল জঙ্গি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করা।

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমে জঙ্গি কার্যক্রম অনেকটা কমে এসেছে। এখন দেখা যাচ্ছে মাদক বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে যুবসমাজের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে কর্মসূচি শুরু হয়েছে,’ বলে জানান তিনি।

মাদকের ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন: শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া নয়, সারাদেশেই এই কার্যক্রম চলছে। আমরা এসবকে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। কারণ দেশের আইন আছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনেই এসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

কৃষ্ণপদ রায় বলেন, অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক পুলিশও আক্রান্ত হচ্ছে। যারা মাদক নিয়ে ব্যবসা করে তারা আরো অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। নানান অস্ত্র সঙ্গে রাখে। সেখানে আত্মনিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

‘যতদিন মাদক নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততদিন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’

মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের চরম পথ নিয়ে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খানের সঙ্গেও কথা বলেছে চ্যানেল আই অনলাইন।

তিনি বলেন: ৪ তারিখ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। শুধু এখনই নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল র‌্যাব। বর্তমানে স্পেশাল ড্রাইভ দেওয়া হচ্ছে।

মুফতি মাহমুদ খান

তিনি জানান, চলমান অভিযানে এর মধ্যে তিন হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ৫শ’ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর ৩শ’ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন: মাদক নির্মূল অভিযানে গেলে দেখা যায় বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা অস্ত্রসহ থাকে। ফলে অভিযানে গেলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এবারও বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মারা গেছে। তারা গুলি চালালে স্বাভাবিকভাবেই পাল্টা গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে।

ফিলিপিন্সের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিযানের কোন সাদৃশ্য নেই উল্লেখ করে এলিট ফোর্স র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, একটার সঙ্গে আরেকটা মেলে না।

‘অভিযানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা না থাকলে হয়তো কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটবে না। যতদিন মাদক নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততদিন এই কার্যক্রম চলমান থাকবে, পরিস্থিতি বিবেচনায় হয়তো অপারেশনের ধরন চেঞ্জ হবে।’