বগুড়া থেকে রউফ জালাল: কথিত আছে প্রায় দেড়শত বছর আগে এক সাধুকে ঘিরেই বগুড়া’র ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার শুরু। কেউ বলে সন্ন্যাসি মেলা কেউবা বলে মাছের মেলা। আবার কেউবা জামাই মেলা বলে থাকে। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে মেলা শুরু হয়।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ি এলাকায় ইছামতি নদীর তীরে প্রতি বছরই বসে পোড়াদহ মেলা। মেলা উপলক্ষ্যে আশে পাশের গ্রাম এবং উপজেলায় ধুম পড়ে যায় আত্মীয় স্বজনদের আগমনে। বছরের অন্য সময় যাই হোক। মেলা উপলক্ষ্যে আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করতেই হবে। এমন ঐতিহ্য চলে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বুধবার মেলা উপলক্ষ্যে ইছামতি নদীর তীরে হাজার হাজার মানুষের কেনা-কাটার ধুম। মেলার বিশেষ ঐতিহ্য বড় বড় মাছ এবং বড় বড় মিষ্টি। এবার পোড়াদহ মেলায় সবচেয়ে বড় বাঘাইড় মাছের ওজন ছিল ৮২ কেজি। মেলার সব্বোর্চ এ মাছের দাম হাকা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এছাড়া মেলায় উঠেছে বোয়াল মাছ, কাতল মাছ, রুই মাছ, পাঙ্গাস মাছ, চিতল মাছ সহ সব ধরনের মাছ। ৫ কেজি ওজন থেকে শুরু করে ৬৫ কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে মেলায়। মেলা উপলক্ষ্যে প্রথম দিন বুধবারকে বলা হয় জামাই বরণ এবং দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বউমেলা। বৃহস্পতিবার শুধু মেয়েরাই কেনাকাটা করবে।
মাছের পাশাপাশি মেলায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি উঠেছে। সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে মেলায়। মিষ্টিগুলো আবার বিভিন্ন আকৃতির। কোনটা মাছ আকৃতির, কোনটা বিভিন্ন পশুপাখির আকৃতির। সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের দোকানে এক মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকায়।
মেলায় ১ কেজি, ২ কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হরেক প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। মেলা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী অন্তত ২০ গ্রাম আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মেলায় মাছ কিনতে আসা আসলাম উদ্দিন জানালো, তিনি বিদেশে থাকেন। ঈদে আসতে পারেনি। কিন্ত মেলা উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন।
মালিয়ানডাঙ্গা গ্রামের রেহান জানান, মেলা উপলক্ষ্যে তাদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজনে ভরে গেছে। মেলায় মাছ ও মিষ্টি কিনতে এসেছি। মেলা উপলক্ষ্যে যে আনন্দ হয় আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে তা আমাদের এখানে ঈদেও হয় না।
গাবতলী উপজেলার মড়িয়া গ্রামের মাছ বিক্রেতা ইসলাম জানান, এবারের মেলায় তিনি ৪০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ নিয়ে এসেছেন। মাছটির দাম হাকা হয়েছে আশি হাজার টাকা।
এ মেলায় মাছ, মিষ্টি, ফর্নিচার, বড়ই, পান শুপারী, তৈজস পত্র, খেলনা থাকলেও কালক্রমে মাছের জন্য বিখ্যাত । মেলাকে ঘিরে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে থাকে। মেলার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষের কাছে বৃহত্তম উৎসব। মেলাকে কেন্দ্র করে জামাই ও মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের দাওয়া দেয়া হয়ে থাকে। তিনি আরো জানান, আমরা দাদার কাছ থেকে শুনেছি প্রায় আড়াইশ বছর আগে থেকে এই মেলা হয়ে আসছে।
কথিত আছে, পোড়াদহ মেলার সংলগ্ন ইছামতি নদীতে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে অলৌকিকভাবে একটি কাতল মাছ তার পিঠে সোনার চালুনি নিয়ে ভেসে উঠতো। মাঘের শেষ বুধবার এই অলৌকিক ঘটনা দেখার জন্য লোকজন জড়ো হতো। পরে এক সন্যাসী ওই নদীর তীরে একটি বটগাছের নিচে পুজার আয়োজন শুরু করে। পূজাকে ঘিরে মেলার শুরু হয়।