বাংলাদেশ ক্রিকেটের নব সূর্যোদয় দেখল মাউন্ট মঙ্গানুই। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপাধারী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস লিখল মুমিনুল হকের দল। ৪০ রানের লক্ষ্যে নেমে ৮ উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। দুই টেস্ট সিরিজে গেল এগিয়ে।
কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংসে একেবারেই দাঁড়াতে দেননি টাইগার বোলাররা, ১৬৯ রানে অলআউট করে দেন। তাতে লাল-সবুজদের জয় হয়ে দাঁড়ায় কেবলই সময়ের ব্যাপার। শেষদিনের প্রথম সেশনেই ধরা দেয় বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সব ফরম্যাট মিলিয়ে টাইগারদের প্রথম জয় এটি। ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকার পর হারের স্বাদ পেল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। ২০১৭ সালের পর স্বাগতিকরা টানা ৮ টেস্ট সিরিজে জিতেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটানোর সুযোগ বাংলাদেশের।
পঞ্চম দিনের শুরুতে অভিজ্ঞ রস টেলর ও কাইল জেমিসনের উইকেট তুলে তোপ অব্যাহত রেখেছিলেন ইবাদত হোসেন, ৬ উইকেট জমান ডানহাতি পেসার। জোড়া সাফল্য এনে দেন তাসকিন আহমেদ। শেষটা টানেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
প্রথমে ব্যাট করে ৩২৮ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গোলে ৪৫৮ রান। লিড নেয় ১৩০ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের ১৬৯ রানে গুটিয়ে জয়ের মঞ্চ গড়ে সফরকারীরা। টাইগারদের সামনে মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। ২ উইকেট হারিয়ে সেটি ছুঁয়ে ফেলের মুমিনুল-মুশফিকরা।
নিউজিল্যান্ড: ৩২৮ ও ১৬৯, বাংলাদেশ ৪৫৮ ও ৪২/২ (টাইগাররা ৮ উইকেটে জয়ী)
জয়ের লক্ষ্যে নেমে ৩ রান করে আউট হন সাদমান ইসলাম, দলীয় রানও তখন ৩। সাউদির অফস্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে ব্লান্ডেলের গ্লাভসবন্দি হন।
শুরুর ধাক্কা সামলে নেন অধিনায়ক মুমিনুল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেট টিকিয়ে রেখে দুজনে মনযোগী হন জয়ের দুয়ারে যেতে। থিতু হয়ে দুজনেই কিউই বোলারদের সীমানাছাড়া করতে থাকেন।
শান্ত শেষটা টেনে যেতে পারেননি। ৩ চারে ১৭ রানে জেমিসনের শিকার হন। প্রথম স্লিপে টেলরের দর্শনীয় ক্যাচে পরিণত হন। মুমিনুলকে ফেরানো যায়নি, ৩ চারে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন দলপতি। জয়ের মুহূর্তে সঙ্গী ছিলেন ৫ রানে অপরাজিত মুশফিকুর রহিম। তার ব্যাটেই আসে নতুন ইতিহাস রচনার রান।
বুধবার দিনের দ্বিতীয় ওভারে ইবাদতের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন মুমিনুল। বাজিমাত। ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফস্টাম্পের বাইরে গুডলেন্থে সুইং করিয়েছিলেন টাইগার পেসার। ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন টেলর। কোনাকুনি ভেতরের দিকে ধেয়ে যাওয়া বল ব্যাটে সামান্য ছোঁয়া দিয়ে প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত হানে। ১০৪ বলে দুই চারে ৪০ রানের ইনিংস থামে।
প্রথমবার পাঁচ উইকেটের দেখা পান ইবাদত। ২০১৩ সালের পর প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে বিদেশে ৫ বা ততোধিক উইকেট পেলেন। আট বছর আগে জিম্বাবুয়েতে কীর্তিটি ছিল পেসার রবিউল ইসলামের।
পরের ওভারে ফের স্বাগতিক লাইনআপে আঘাত হানেন ইবাদত। লেগস্টাম্পের উপর ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ বলে জেমিসন ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন। ব্যাটের কানায় লেগে মিডঅনে উঠে যায়, শরিফুল ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন। রানের খাতা না খুলেই জেমিসনের বিদায়।
ইবাদতের পর তাসকিন আহমেদ উইকেট তোলার উৎসবে যোগ দেন। রাচিন রাভীন্দ্র ১৬ রান করে লিটনের গ্লাভসে ধরা পড়েন ডানহাতি পেসারের বলে। তাসকিন পরে বোল্ড করেন টিম সাউদিকে।
খানিক অপেক্ষা, তাসকিনের পরপর দুই বলে চার মেরে ট্রেন্ট বোল্ট পাল্টা আক্রমণ করতে চান। লিড বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, তখন দৃশ্যপটে মিরাজ। কিউই কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন। ৮ রান করা বোল্ট ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মেরেছিলেন, ডিপ মিডউইকেটে দ্বাদশ খেলোয়াড় তাইজুলকে খুঁজে পায় বল। পেছন দিকে অনেকটা দৌড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচে তিনি শেষ টেনে দেন স্বাগতিক ইনিংসের।
বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেন ২১ ওভারে ৬ মেডেন ৪৬ রান দিয়ে নেন ক্যারিয়ারসেরা ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে তিনি পান ১ উইকেট। তাসকিন আহমেদ ১৪ ওভারে ৩৬ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট, বাকি ১ উইকেট পকেটে পুরেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, প্রথম ইনিংসে তার ঝুলিতে ছিল ৩ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ওপেনার ডেভন কনওয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান, করেন ১২২ রান। সঙ্গে হেনরি নিকোলসের ৭৫ রানে ৩২৮ তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। অধিনায়ক মুমিনুলের ৮৮, লিটন দাসের ৮৬, মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৮ ও মিরাজের ৪৭ রানে ৪৫৮ করে প্রথম ইনিংসে থামে বাংলাদেশ। ১৩০ রানের বড় লিড পায়। যার উপর ভিত্তি করে রচিত হল নব ইতিহাস।