জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে প্রত্যাশিত জয়ই পেয়েছেন মাশরাফীরা। বাংলাদেশের ৩৫০তম ওয়ানডেতে সফরকারীদের ২৮ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।
রোববার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে দাঁড় করানো ২৭২ রানের লক্ষ্যে নামা জিম্বাবুয়ে নির্ধারিত ওভারে ২৪৩-এর বেশি এগোতে পারেনি।
দারুণ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে লিড নিল মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল। পরের ম্যাচটি বুধবার, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সেখানেই হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে, ম্যাচ মাঠে গড়াবে শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ-২৭১/৮ (৫০); জিম্বাবুয়ে-২৪৩/৯ (৫০)
লম্বা সময় পর ঘরের মাটিতে সিরিজ। প্রতিপক্ষ খর্বশক্তির হলেও সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশ দলের মাঠে নিবেদন কেমন থাকে সেটিই ছিল দেখার। পরীক্ষায় নেমে শুরুতে কিছুটা ধুঁকলেও পরের পুরোটা সময় আধিপত্য দেখিয়েছেন মাশরাফীরা।
জিম্বাবুয়ের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের তুলনায় ভালো। ওপেনিং জুটিতে তাদের আসে ৪৮ রান। মাসাকাদজার দল ফিফটি ছুঁয়ে ফেলে ৮.১ ওভারেই। বাংলাদেশের ফিফটি আসে ১১.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে।
তবে মোস্তাফিজ, মিরাজ, নাজমুল অপুদের সামনে জিম্বাবুয়ের শতরানে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় কঠিন পথ। দুর্দান্ত শুরু করা দলটির স্কোর হয়ে যায় ২৫.১ ওভারে ১০০/৫।
সেখান থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। শেষের সারির ব্যাটসম্যানরা উইকেটে পড়ে থেকে কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন। ৫০ ওভার খেলতে পারাই হয়ে ওঠে অতিথিদের বড় সান্ত্বনা!
১৬৯ রানে ৮ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে নবম উইকেট জুটিতে যোগ করে ৬৭ রান। এটিই তাদের ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি।
৫৪ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন শেন উইলিয়ামস। কাইল জার্ভিস করেন ৩৩ বলে ৩৭ রান। জিম্বাবুইয়ান ওপেনার সেফাস ঝুঁয়াও করেন ৩৫ রান।
১০ ওভারে ৪৬ রানে ৩ উইকেট নেন টাইগার অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। ৮ ওভারে ৩৮ রানে ২টি উইকেট বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর দখলে যায়। তিনি নিজের শেষের ওভারটিতে দেন ১৭ রান। মোস্তাফিজুর রহমান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেন একটি করে উইকেট। ১০ ওভারের কোটা শেষ করেও এদিন উইকেটের দেখা পাননি মাশরাফী।
আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ধ্বংসস্তূপের মাঝে আলো জ্বালান ইমরুল কায়েস। তিনি সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্কে পৌঁছাতেই জ্বলে ওঠে হোম অব ক্রিকেটে আসা হাজারো দর্শকের মোবাইলের ফ্ল্যাশ। উদযাপনও হয় বিশেষ। তিনঅঙ্ক ছুঁয়ে পরে হন আরও বিধ্বংসী। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে এ বাঁহাতি ওপেনারের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ৩ নম্বর উইকেটে অসমান বাউন্স, মুভমেন্ট, টার্ন, সুইং সবই ছিল। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ইমরুল খেলে যান সাবলীল। বাংলাদেশ ইনিংসের ৮ বল বাকি রেখে যখন আউট হন, নামের পাশে ১৪৪। ১৪০ বলের ইনিংসটি সাজান ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কায়।
বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন করা ইমরুল যখন আউট হন, তখনও ৮ বল বাকি। আর ১১ রান করতে পারলেই ছাড়িয়ে যেতে পারতেন ২০০৯ সালে করা তামিম ইকবালের ১৫৪ রানের দেশিয় রেকর্ড। সেটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস। ইমরুলেরটি অবশ্য যৌথভাবে দ্বিতীয়। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিক খেলেছিলেন ১৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংস।
শুরুতেই লিটনের উইকেট হারিয়ে হোঁচট খাওয়া বাংলাদেশ বাকি পথ পাড়ি দেয় ইমরুলের ব্যাটে। সপ্তম উইকেটে সাইফউদ্দিনকে নিয়ে রেকর্ড জুটি গড়েন এ ওপেনার। তাদের ১২৭ রানের জুটি বদলে দেয় সব। এর আগে সপ্তম উইকেটে জুটির শতরান ছাড়ানোরই অভিজ্ঞতা হয়নি টাইগারদের।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নামা সাউফউদ্দিন খেলেন ৬৯ বলে ৫০ রানের ইনিংস। শেষ ৭ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭১ রান।
এশিয়া কাপের ওপেনিং জুটির ভঙ্গুর অবস্থার দেখা মেলে এদিনও। ফাইনালে স্বীকৃত ওপেনারের জায়গায় নেমে পড়েছিলেন মিরাজ। লিটন দাসের সঙ্গে জুটিতে আসে ১২০ রান। পরের ম্যাচেই আবার আগের জায়গায় ফিরে গেল বাংলাদেশ।
শুরুতে জীবন পাওয়া লিটন দৃষ্টিকটুভাবে আউট হন ৪ রান করে। ডানহাতি পেসার টেন্ডাই চাতারাকে উইকেট দেন। দলের রান তখন ১৬। অভিষিক্ত ফজলে মাহমুদ রাব্বি আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। ১৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
প্রতিরোধ গড়েন মুশফিক ও ইমরুল। তাদের ৪৯ রানের জুটি ভাঙে লেগস্পিনার মাভুতার বলে। লেগস্টাম্পের বাইরের বল স্কয়ারে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষকের হাতে। ২০ বলে ১৫ রান ইনিংস থামে মুশফিকের।
৬৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব ভালোই সামলাতে থাকেন ইমরুল ও মিঠুন। ৭৪ বলে ৭১ রানের জুটি এনে দেন তারা। ভালো সংগ্রহের ভিত আসে। মিঠুন করেন যান ৩৭ রান। তবে মিডলঅর্ডারে মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজের দ্রুত বিদায়ে কক্ষপথ হারাতে বসেছিল টাইগাররা।
২ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারালে স্কোরবোর্ডের চেহারা হয়ে যায় জীর্ন, ১৩৯/৬। পেস-অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকে নিয়ে ইমরুলের লড়াই শুরু সেখান থেকেই। সপ্তম উইকেট জুটিতে তারা লড়ে গেছেন অনবদ্যভাবে। সেটাই ম্যাচ এনে দিল নিজেদের দিকে।
দারুণ বোলিং করেছেন জিম্বাবুইয়ান পেসার কাইল জার্ভিস। ৯ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। চাতারা নেন দুই উইকেট। একটি উইকেট নিয়েছেন মাভুতা। যদিও ম্যাচ জয়ের মতো ভূমিকা থাকল না সেসবে। কারণ দিনটি যে বাংলাদেশের!