চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের নামে হয়রানিমূলক মামলা, গ্রেপ্তার, কারাগারে পাঠানো ও রিমান্ডের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী ও স্বাধীন শিক্ষকবৃন্দ।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশ করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামীনা লুৎফা বলেন, মানুষের মত প্রকাশের সুযোগ না দিয়ে শুধু উন্নয়নের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোনো লাভ নেই। মাইদুল ইসলামসহ যে সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। তাকে সসম্মানে চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সমালোচনা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি.এস. হাবিব বলেন, সংগঠন নিজের স্বার্থে কাজ করছে। একজন শিক্ষক কারাগারে আছে। এটা খুবই লজ্জার বিষয়। তিনি সত্যের পক্ষে, তাই আমরা তার সাথে আছি।
‘যে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই,সে দেশ আসলে কতটুকু স্বাধীন?’ বলে আক্ষেপ করেন ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা তাসলিম সিরাজ।
জবির শিক্ষক নাসীর উদ্দিন বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন সময় এসেছে মুখ খোলার। সমালোচনা থেকে ভালোটুকু নিয়ে, খারাপটা বর্জন করতে হবে।
স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারাটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উল্লেখ করে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, কথা বলতে পারাটা আমাদের অধিকার, আমরা এই অধিকার অর্জন করেছি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।
প্রতিবাদ সমাবেশের সঞ্চালক ফাহমিদুল হক উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, নিম্ন আদালত মাইদুল হককে রিমান্ডে পাঠালেও উচ্চ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। আমরা এই বিষয়ে ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মত বিনিময় সভা করবো।
এছাড়া প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আব্দুর রাজ্জাক খান, কাজলী শেহরীন, মার্জিয়া রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নেহাল করিম, নাসির উদ্দিন(জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), মুহম্মদ আজম, রুশাদ ফরিদী, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক জে.এস. হাবিবসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা সদ্য কার্যকর হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমালোচনা করেন। এই আইনকে বাকস্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলেও মন্তব্য করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে গত ২৩ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় চবি শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ (২) ধারায় মামলা করেন চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম।
এরপর গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে তিনি আট সপ্তাহের আগাম জামিন নেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই আট সপ্তাহের জামিন শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মাইদুল ইসলাম। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।