ঢাকার মঞ্চে দুদিন হাজির হবেন যথাক্রমে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মরমীয়া হাছন রাজা। ৪ ও ৫ মে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে সন্ধ্যায় উপস্থিত হবেন দুজন। মঞ্চ নাটকের চরিত্র হয়ে। তাদেরকে মঞ্চে আনবে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় দলটির ৯ম প্রযোজনা ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ এবং শনিবার তাদের সর্বশেষ প্রযোজনা ‘হাছনজানের রাজা’ মঞ্চায়িত হবে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার মঞ্চে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়। ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ এবং ‘হাছনজানের রাজা’ নাটকটি রচনা করেছেন শাকুর মজিদ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা।
আমি ও রবীন্দ্রনাথ এর গল্পে মূর্ত হবেন রবীন্দ্রনাথ। দেখা যাবে অথৈ একদিন তার বন্ধুর সাথে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেড়াতে যায়। কুঠিবাড়ি দেখতে দেখতে এক সময় অথৈ একাই দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। হঠাৎ অথৈয়ের সামনে এসে হাজির হন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি অথৈকে কুঠিবাড়ি ঘুরিয়ে দেখার আহ্বান জানান। অথৈ ভুলে যায় তার বন্ধুসহ পৃথিবীর সবকিছু। সে রবীন্দ্রনাথের সাথে কথা বলতে থাকে। অথৈয়ের সামনে পর পর হাজির হয় ২৯ বছর, ৬৯ বছর, ২১ বছর ও ৮০ বছরের ভিন্ন ভিন্ন রবীন্দ্রনাথ। এই চার বছরের রবীন্দ্রনাথের সাথে অথৈয়ের কথা হয় সেই সময়ের রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন ও তাঁর সৃজনশীলতা নিয়ে। আর রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি বয়সের সাথে অথৈও বদলে যেতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও বয়সে। বিভিন্ন বয়সী রবীন্দ্রনাথের সাথে অথৈয়ের কথপোকথনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম ও তাঁর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক।
‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটিতে অভিনয় করেছেন- নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, আউয়াল রেজা, রামিজ রাজু, তৌহিদ বিপ্লব ও সরোয়ার সৈকত। নূনা আফরোজ নাটকটি নির্দেশনার পাশাপাশি এর পোশাক ও মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন। সঙ্গীত পরিকল্পনায় রামিজ রাজু ও আলোক পরিকল্পনায় তৌফিক রবিন।
অন্যদিকে ‘হাছনজানের রাজা’ নাটকটি প্রাঙ্গণেমোরের ১৩তম প্রযোজনা। চলতি বছরেরে এপ্রিলে নাটকটি ঢাকার মঞ্চে আসে। নাটকে উদ্ভাসিত হবেন ভাটি অঞ্চলের মরমীয় শিল্পী হাছন রাজা। সেই হাছন রাজা (১৮৫৪-১৯২২), যিনি বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার একজন সামন্তপ্রভু ছিলেন।
গল্পে দেখা যাবে, পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারীর মালিকানা চলে আসে হাছন রাজার কিশোর বয়সে। অর্থ, বেহিসাবী সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপোরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জাগতিক লোভ লালসা, ক্ষমতায়ন, জবরদখল করেও তিনি তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন। কিন্তু এক সময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। মধ্য পঞ্চাশে এসে তিনি ভিন্ন এক মানুষে পরিনত হয়ে যান। তাঁর বোধ হয় যে এ জগত সংসারের সব অনাচারের মূলে আছে অতিরিক্ত সম্পদ। কিছু দিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা মানুষেরা আসলে মহা শক্তির কাছে একেবারে নশ্বর। তিনি তাঁর সম্পদ জন কল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওরে হাওরে ভাসতে থাকেন।
আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহা পরাক্রমশীল শ্রষ্ঠাকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আবিস্কার করেন, তাঁর নিজের মধ্যেই তাঁর বাস। তাঁর যে পিয়ারীকে সবাই হাছনজান বলে জানে, সেই আসলে হাছন রাজা। জগতের মানুষের কাছে যিনি রাজা বলে চিহ্নিত ছিলেন, হাছন রাজার কাছে সে কেউ নয়, বরং পিয়ারী হাছনজানের ভেতরেই প্রকৃত হাছন রাজা বিরাজমান ছিলেন।
‘হাজনজানের রাজা’ নাটকটিতে অভিনয় করেছেন রামিজ রাজু, আউয়াল রেজা, মাইনুল তাওহীদ, সাগর রায়, শুভেচ্ছা রহমান, সবুক্তগীন শুভ, জুয়েল রানা, আশা, প্রকৃতি, প্রীতি, সুজয়, নীরু, সুমন, বাঁধন ও রুমা।এ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির, সঙ্গীত পরামর্শক হাছন রাজার গানের জনপ্রিয় শিল্পী সেলিম চৌধুরী, সঙ্গীত পরিকল্পনা রামিজ রাজু, আলোক পরামর্শক বাংলাদেশের প্রবীন আলোক পরিকল্পক ঠা-ু রায়হান, আলোক পরিকল্পনা তৌফিক আজীম রবিন এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন নূনা আফরোজ।