সমাজ পরিবর্তনে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিন নারী ও বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলকে “নাসরীন স্মৃতি পদক ২০১৬” প্রদান করেছে একশনএইড বাংলাদেশ। যারা নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রোববার ঢাকার ছায়ানট অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার ও সম্মাননা তুলে দেয় একশনএইড বাংলাদেশ। এবছর চারটি বিষয়ে সম্মাননান দেয়া হয়।
সমাজ পরিবর্তনে কর্মজয়ী প্রতিবন্ধী তরুণ/ যুবা বিভাগে পুরষ্কার পেয়েছেন পাবনার মোছাঃ মর্জিনা। ‘রাজনীতিতে প্রান্তিক নারী’ বিষয়ে সম্মাননা পেয়েছেন দিনাজপুরের রাজিয়া সুলতানা। ‘যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো’ বিষয়ে সম্মাননা পেয়েছেন রংপুরের মরিয়ম বেগম। ‘খেলাধুলায় নারীর অবস্থা ও অবস্থান’ বিষয়ে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল।
জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা ও কাজের স্বীকৃতি পেয়ে আবেগে আপ্লুত মর্জিনা বলেন, ‘এবারই প্রথম ঢাকায় আসলাম। এই পুরষ্কার না পেলে হয়ত কখোনো আসা হত না ঢাকায়। প্রতিবন্ধী হবার করণে জীবনের শুরু থেকে নানা সমস্যায় পড়েছি। তারপরও লেখাপড়া ছাড়িনি। কাজ করেছি পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা দিতে।’
রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘ছোটবেলায় অবহেলিত ছিলাম। নিজের আর্থিক ও মানসিক কষ্টের সঙ্গে যোগ হয় মানুষের কষ্ট। তখন থেকেই মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা ছিল। তাই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। এবার আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এই পুরষ্কার আমার দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিল। আমি আপ্লুত, অভিভুত।’
মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমি নারীর বঞ্চনা, অধিকার, নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি। সামাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছি। তবে ভাল লাগ হলো, মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি। তার স্বীকৃতি আজ পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক জাহানারা আলম বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেট বলতে শুধু পুরুষদের কথা বোঝাত। আমরা সেই ধারণার পরিবর্তন আনতে পেরেছি। এই পথচলাটা সহজ ছিল না। আমাদের দেখে অনেক নারী আজ উৎসহিত হচ্ছেন। সমাজে নানাক্ষেত্রে নারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। যারা তাদের জন্য কাজ করছে, ওই ব্যক্তিদের এই ধারণের পুরষ্কার দেয়া উচিৎ।’
অনুষ্ঠানে একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য মনসুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘একশনএইড বাংলাদেশের সাবেক কন্ট্রি ডিরেক্টর নাসরিন হক সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করতেন। এজন্য পুরষ্কারটা তাদেরকেই দেয়া হয়, যারা পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করেন।’
নিজেরা করি-এর নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির বলেন, ‘নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় একজন কান্ডারী ছিলেন নাসরিন পারভিন হক। আজ যারা পুরষ্কার পেলেন তারা সত্যিই সমাজের উন্নয়নে, নারীর অধিকারের জন্য কাজ করছেন। এই পুরষ্কার এই মানুষদের কাজকে বেগবান করবে।’
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারহ্ কবির বলেন, ‘আজকে আমাদের নারীরা নানাভাবে, নানা করণে নির্যাতিত ও অবহেলিত। এই জীবন সংগ্রামের মধ্যেও মরিয়মরা সমাজ পরিবর্তন করছে। জাহানারারা সমাজকে আলোর পথ দেখাচ্ছেন। আমরা চাই এই মানুষের সংখ্যা বাড়ুক। দূর হোক সমাজের অনিয়ম।’
একশনএইড বাংলাদেশর প্রায়ত কান্ট্রি ডিরেক্টর নাসরীন হকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি একশনএইড বাংলাদেশ ২০০৭ সাল থেকে নাসরীন স্মৃতি পদক প্রদান করে আসছে। যার মূল লক্ষ্য নাসরীন হকের আদর্শ, উদ্যম, বিশ্বাস আর স্পৃহাকে সাধারণ মানুষ, উন্নয়ন কর্মীসহ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া।