শনিবার সকালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বারৈরহাট এলাকায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমীর (নেপ) মহাপরিচালক মো. ফজলুর রহমান। এই ঘটনায় আরও পাঁচ জন আহত হয়েছেন। মো. ফজলুর রহমানকে নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে স্মৃতি চারণ করেছেন নেত্রকোণা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. আফজালুর রহমান।
শনিবার সন্ধ্যায় তিনি আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের সমাজে এখন মানুষের বড্ড অভাব। এখন সবাই পদ-পদবি নিয়ে ব্যস্ত।এই স্রোতের বিপরীত একজন মানুষ ছিলেন ফজলুর রহমান।তাঁর মতো একজন নিরঅহংকার, সজ্জন এবং শিক্ষানুরাগী মানুষকে আমরা এভাবে হারাবো তা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। একরম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। পরিবারগুলোতে বিপর্যয় নেমে আসে।
অধ্যাপক মো. আফজালুর রহমান আরও বলেন, ফজলুর রহমান জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমীর (নেপ) মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই সব দিক থেকে বিপ্লবের সূচনা হয়। বিশ্বের উন্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সব থেকে বেশি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও মানসম্মত। কিন্তু আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা সবদিক থেকে অবহেলিত। ফজলুর রহমান এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজে নেমেছিলেন। বেঁচে থাকলে হয়তো একদিন সফলও হতেন তিনি। দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় এরকম একজন কর্মকর্তা ভীষণ দরকার ছিলো।
মহাসড়কের এই দুরবস্থার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় মানুষগুলোকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। দায়িত্বপালন করতে গিয়ে এরকমভাবে একজন একজন করে কাজের মানুগুলোকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। একটি মাইক্রোকে একটি ট্রাক পিষে দিয়ে চলে গেলো। এটা কোন কথা হলো। রাস্তা যদি এমন মরণ ফাঁদ হয়, তাহলে হবে কি করে? আমরা এত বড়বড় কাজ করছি। আমাদের দেশে কতো শত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। কিন্তু আমরা রাস্তার মরণফাঁদ ঠিক করতে পারছি না। রাস্তায় মরণ ফাঁদ ঠিক করতে না পারলে অন্য উন্নয়ন করে লাভ নেই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজে প্রচুর মানুষ আছে। মনুষ্যত্বহীন বড় বড় কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু ভালো মনুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা ক্ষমতার দাপট দেখাতে ব্যস্ত থাকেন। এরকম একটা সংকটের দিনে আমরা এমন একজন মানুষকে হারালাম, প্রশাসনে যিনি ছিলেন সহজপ্রাণ ও হৃদয়বান মানুষ, যা এখন বিরল। কি পরিমাণ দুর্ভাগা জাতি আমরা। একটি নিরাপদ সড়ক আমাদের নেই। চাকরির সুবাদে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে জীবন হারাতে হল ফজলুর রহমানকে। কেমন মর্মান্তিক ব্যাপার! এরকম একজন মানুষ এখন খুবই দরকার ছিলো। তিনি ছিলেন সবার প্রতি খুবই আন্তরিক এবং অতিথি পরায়ণ । তার জীবন যাপনের মানবিক দিকগুলো ছিলো চোখে পড়বার মতো।
বিগত দুই বছর যাবত নেপে কর্মরত ছিলেন ফজলুর রহমান। তিনি ময়মনসিংহের কালিবাড়ী রোডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৯৮২ (স্পেশাল) ব্যাচের একজন সদস্য। সরকারের একজন যুগ্ম সচিব হিসেবে ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে তিনি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ) এর মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, থানা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন), মেরিন সেফটি অফিসার ও স্পেশাল ম্যাজিষ্ট্রেট, উপ-সচিব ও ডিআইজি (প্রিজন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।