কয়েকদিনের মহানাটকের পর ভারতের মহারাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। রাজ্যপাল ভগৎ সিং কিশোরীর প্রস্তাবের পর এ সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার ২০ দিন পরেও বিজেপি, শিবসেনা ও এনসিপি সরকার গঠন করতে পারেনি। যদিও এই তিনটি দলকেই আলাদা আলাদাভাবে সরকার গঠনের আহ্বান জানান রাজ্যপাল ভগৎ সিং। কিন্তু কোনো দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়ক জোগাড় করতে পারেনি।
মঙ্গলবার এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।
তবে এই নাটকের শেষ অঙ্কে শিবসেনা তাদেরকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়ায় সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছে। তাদের দাবি ছিল ৭২ ঘণ্টা সময়ের। কিন্তু রাজ্যপাল তাদেরকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন।
এদিন বেলা ১১টায় রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে এনসিপি। তারাও রাজ্যপালের কাছে আরও সময় চায়। শিবসেনাকে সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের জন্য এনসিপি ও কংগ্রেসের আলোচনার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেন রাজ্যপাল।
এই নির্বাচনের আগে ভারতের এই রাজ্যটিতে বিজেপি নিরঙ্কুশ জয় পাবে বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন। এমনকি বেশ কয়েকটি জরিপও তাই বলেছিল। কিন্তু ২৪ অক্টোবর নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় বিজেপি-শিবসেনা জোট গত নির্বাচনের চেয়েও খারাপ ফল করেছে। ২৮৮ আসনের বিধানসভায় বিজেপি পায় ১০৫ আসন, শিবসেনা ৫৬, এনসিপি ৫৪ এবং কংগ্রেস জেতে ৪৪টি আসন। সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ১৪৫টি আসন।
শিবসেনাকে নিয়ে অনায়াসেই সরকার গঠন করে ফেলতে পারতো বিজেপি। কিন্তু ৫০:৫০ ফর্মুলার কথা বলে আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ চেয়ে বসে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু বিজেপি তা মানতে নারাজ ছিল। আর এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের জোট ভেঙে যায়।
সরকার গঠনের জন্য রাজ্যপাল ভগৎ সিং কিশোরীর আমন্ত্রণ পেয়েও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন না থাকার কথা বলে সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয় বিজেপি। এরপরই রোববার শিবসেনাকে সরকার গঠনের জন্য বলা হয়। মূলত এরপর থেকেই কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে শিবসেনা। এক সময়ের এই দুই শত্রু ই বন্ধু হয়ে সরকার গঠনে হাত বাড়িয়ে দেয়।
পরেরদিন সোমবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। তারা তাদের অতীতের দলের মতপার্থক্য মুছে ফেলতে চান বলেও ওই দিন জানান দুই প্রধান।
এমনকি এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের শর্ত অনুযায়ী সোমবার নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন শিবসেনার একমাত্র মন্ত্রী অরবিন্দ সাওয়ান্ত। এরপরই সরকার গঠন নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।
অনেকেই নিশ্চিত করে বলা শুরু করেন সোনিয়া গান্ধী এবং শরদ পাওয়ারকে নিয়ে সরকার গঠন করছে শিবসেনা। তবে কংগ্রেস তাদের সমর্থনের কথা লিখিতভাবে না দিয়ে আরও আলোচনার কথা বলেন।
কিন্তু এর মধ্যেই শিবসেনাকে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়কের সমর্থনপত্র দেখাতে না পারায় তৃতীয় বড় দল হিসেবে এনসিপিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল।
যাদেরকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।