নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ও দগ্ধদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দিতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের করা পৃথক দুটি আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত রোববার এই স্থগিতাদেশ দেন। চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষ ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের আবেদন দুটি আগামি ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।
আদালতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আর রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার ও মার-ই-য়াম খন্দকার।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকারের করা জনস্বার্থমূলক রিটের শুনানি নিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ও দগ্ধদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এই আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্য নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে ভুক্তভোগীদের মাঝে এই টাকা বিতরণ করতে বলা হয়। সেই সাথে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ বিষয়ে রুল জারি করেন। রুলে, মসজিদে বিস্ফোরণ নিহত ও দগ্ধদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, গণপূর্ত সচিব, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)’র চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)ও বায়তুস সালাত জামে মসজিদ কমিটিসহ ১৩ বিবাদিকে এই রুলের জবাব দিতে বলেন হাইকোর্ট।
তবে হাইকোর্টের আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বিস্ফোরেণের ঘটনার দায় আসলে কার, সে বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এখনও দায় নিরূপন করেনি। ফলে এ আদেশ দায় নিরূপনের আগেই দায় চাপিয়ে দেওয়ার মত। তাই রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করবে।’
গত ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেসময় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩১ জন।